ইতিকাফ কী? এর হাদিস, ইতিকাফ ভাঙার কারন,ইতিকাফের গুরুত্ব ও ফজিলত, এবং মহিলাদের ইতিকাফ !






 ইতিকাফ কীঃ-


🙌রহমত, বরকত আর নাজাতের বার্তা নিয়ে হাজির হয় মাহে রমজান। রমজানের শেষ দশকের গুরুত্বপূর্ণ আমল হচ্ছে- ইতিকাফ।


🙌ইতিকাফ শব্দটি আরবি। এর অর্থ অবস্থান করা। পরিভাষায় ইতিকাফ বলা হয় আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে মসজিদে অবস্থান করা। কদরের রাত প্রাপ্তির আকাঙ্খায় মহান আল্লাহর একান্ত সান্নিধ্যে লাভের জন্য রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফকে সুন্নত করা হয়েছে।


👉 ইত্তেকাফ এর অর্থ কী ?


🙌ইতিকাফ  একটি  আরবি শব্দ  এর অর্থ হলো আকফ মূলধাতু থেকে নির্গত। ইতিকাফের আভিধানিক অর্থ হলো কোন জিনিসকে আঁকড়ে ধরে রাখা  এবং তার মধ্যে নিজেকে আবদ্ধ রাখা [রত থাকা. মগ্ন থাকা. লিপ্ত থাকা] সেই জিনিসটা হোক ভালো কিংবা মন্দ। 


মহান আল্লাহ বলেন,


🙌ইব্রাহিম (আঃ) এর পিতা এবং তার সম্প্রদায়কে বলল  যে মুর্তিগুলোর পূজায় তোমরা রত আছ  কিংবা যাদের পূজারী হয়ে বসে আছো সেগুলো কি? 


কুরআন ২১/৫২


🙌শরীয়তের পরিভাষায় আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় বিশেষ ব্যক্তির মসজিদের মধ্যে নিজেকে আবদ্ধ রাখা এবং সেইখানে অবস্থান করা  সেইজন্য সকল মানুষ এবং সংসারের সকল কাজ কর্ম থেকে দূরে থাকতে হবে  এবং সওয়াবের কাজ করতে হবে যেমন  নামায, যিকির এবং কুরআন তেলাওয়াত আরও বিভিন্ন ইবাদতের জন্য একমন হওয়াকে ইতিকাফ বলে।


 ইত্তেকাফ কত প্রকার?


 ইতিকাফ ৩ প্রকার।

✋.সুন্নত : শেষ দশকের ইতিকাফ।

✋নফল : যেকোনো সময়  ইতিকাফ করা যায়। 

✋ওয়াজিব : মানতের ইতিকাফ।


👉ইত্তেকাফ কাকে বলে?


🙌বিশেষ  একটি নিয়তে বিশেষ অবস্থায় আল্লাহ তাআলার আনুগত্যের উদ্দেশ্যে মসজিদে অবস্থান করাকে ইতিকাফ বলে। ইতিকাফরত অবস্থায় বান্দা নিজেকে আল্লাহর ইবাদতের জন্য দুনিয়ার অন্য সকল কিছু থেকে আলাদা করে নেয়। ঐকান্তিকভাবে তালার  সাধনায় মশগুল হয়ে পড়ে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের নিরন্তর সাধনায় করে।


🙌ইতিকাফের মাহাত্ম্য ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে শাহ ওয়ালি উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভি (রহ.) বলেন  মসজিদে ইতিকাফ হচ্ছে হৃদয়ের প্রশান্তি, আত্মার পবিত্রতা ও চিত্তের নিষ্কলুষতা  চিন্তার পরিচ্ছন্নতা ও বিশুদ্ধতা। ফেরেশতাকুলের গুণাবলি অর্জন এবং লাইলাতুল কদরের সৌভাগ্য ও কল্যাণ লাভসহ সব ধরনের ইবাদতের সুযোগ লাভের সর্বোত্তম উপায়। এ জন্য রাসুল (সাঃ) নিজে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ইতিকাফ পালন করেছেন এবং তাঁর বিবিরাসহ সাহাবায়ে কেরামের অনেক জনই এই সুন্নতের ওপর  আমল করেছেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। (হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা : ২/৪২)


👍এতেকাফের জন্য শর্ত হলোঃ-


🙌এর মতে নফল এতেকাফকারীর জন্যও রোজা রাখা শর্ত। যদি কেউ রোজা ব্যতিত এক মাস এতেকাফ মান্নত করে। তার প্রতি রোজা ব্যতিত এক মাস এতেকাফ ওয়াজিব হবে। যদি কেউ রমজান মাসে এতেকাফের নিয়ত করে থাকেন  তাহলে তার জন্য আলাদা ভাবে কোনো রোজা রাখার প্রয়োজন নেই। কিন্তু রমজান মাসে নিয়ত অনুযায়ি আদায় না করলে পরবর্তী সময়ে যখন রোজা রাখবে সেই সময়  ওই এতেকাফ আদায় করতে হবে।


👉 ইত্তেকাফের  গুরুত্বঃ-


🙌অর্থাৎ মহল্লাবাসীর পক্ষ থেকে একজন ব্যক্তি ইতিকাফ করলে সবার পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে। মহল্লাবাসীর কেউ যদি ইতিকাফ না করে, তাহলে সবাই গোনাহগার হবে। ইতিকাফ দ্বারা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নতের অনুসরণ হয়। রাসুল (সাঃ) সব সময় মাহে রমজানের শেষের দশ রোযাতে ইতিকাফ করতেন।


👉 ইত্তেকাফ এর ফজিলতঃ-


🙌ইতিকাফ একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত ইবাদত। ইতিকাফের মাধ্যমে মানুষ দুনিয়ার সবকিছু ছেড়ে আক্ষরিক অর্থেই বাহ্যত আল্লাহর সন্নিধানে চলে যায়। রমজানের শেষ দশক তথা ২০ রমজান সূর্যাস্তের আগে থেকে ঈদের চাঁদ তথা শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যাওয়া বা ৩০ রমজান পূর্ণ হয়ে ওই দিন সূর্যাস্ত পর্যন্ত ইতিকাফ করা সুন্নতে মুআক্কাদাহ কিফায়াহ। কোনো মসজিদ মহল্লায় কয়েকজন বা কোনো একজন আদায় করলে সবাই দায়মুক্ত হবেন। আর কেউই আদায় না করলে সবাই দায়ী থাকবেন। তবে আদায়ের ক্ষেত্রে যিনি বা যাঁরা আদায় করবেন  শুধু তিনি বা তাঁরাই সওয়াবের অধিকারী হবেন।


👉 ইত্তেকাফ এর হাদিসঃ-


👉রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর অসংখ্য হাদিস ইতিকাফ সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে। কয়েকটি হাদিস এখানে উল্লেখ করা হলো—


🙌ইবনে উমার (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন  রাসুলুল্লাহ (সাঃ) রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন।’ (মুসলিম, হাদিস নম্বর ১১৭১)। মদিনায় অবস্থানকালে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) প্রতিবছরই ইতিকাফ পালন করেছেন। শত ব্যস্ততা সত্ত্বেও রমজানে তিনি ইতিকাফ ছাড়েননি।


🙌আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত  রাসুল (সাঃ) প্রতি রমজানে ১০ দিন ইতিকাফ করতেন, তবে যে বছর তিনি ইন্তেকাল করেন, সে বছর তিনি ২০ দিন ইতিকাফে কাটান।  (বুখারি, হাদিস : ১৯০৩)।


🙌ইতিকাফ হলো  একটি মহৎ ইবাদত। এ ইবাদত স্বেচ্ছায় পালন করতে হয়। ইসলামী শরিয়তে বিনিময় দিয়ে ভাড়া করে ইবাদত করানোর সুযোগ নেই। টাকার বিনিময়ে ইতিকাফ করা ও করানো সম্পূর্ণ নাজায়েজ। এভাবে ইতিকাফ করানোর মাধ্যমে  সকল মহল্লাবাসী দায়মুক্ত হয় না। [রদ্দুল মুহতার : ২/৫৯৫, ফাতাওয়া মাহমুদিয়া : ১৭/১৭১]।


👉 ইত্তেকাফ এর নিয়মঃ-


🙌প্রত্যেকটি  ইবাদাতের জন্য নিয়ত করা ফরজ। নিয়ত মানে হলো মনের সংকল্প। আর তার স্থান হল অন্তর মুখ নয়। মহানবী (সাঃ) ও তার সাহাবীদের কেউই কোন নির্দিষ্ট শব্দ মুখে উচ্চারণ করতেন না। তাই তা মুখে উচ্চারণ করা বিদআত  তাছাড়া নিয়তের জন্য কোন বাধা-ধরা শব্দাবলীও নেই। যেকোন ইবাদাতের জন্য মনে মনে সংকল্প করলেই নিয়ত হয়ে যাবে  মুখে কিছু উচ্চারণের প্রয়োজন নেই।


💨 ইত্তেকাফ করা কি ফরজ

💨মহিলাদের ইত্তেকাফের নিয়ম।

💨ইত্তেকাফের মাসায়েল আল কাউসার।



👉যেসব কারণে ইত্তেকাফ ভেঙে যায়ঃ-


🙌শেষ দশকের সুন্নাত ইতিকাফকারীর জন্য মানবীয় ও শরয়ি বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া অন্য কোনো কারণে মসজিদ থেকে বের হওয়া বৈধ নয়, বের হলে ইতিকাফ ভেঙে যাবে। সুতরাং ফরজ গোসল ছাড়া গরম ও গায়ের দুর্গন্ধের কারণে গোসল করার জন্য বের হওয়া জায়েজ নেই। হ্যাঁ, যদি অতীব প্রয়োজন হয় এবং মসজিদে গোসলের সুব্যবস্থা থাকে, তাহলে মসজিদেই গোসল করবে অথবা ভেজা গামছা দিয়ে শরীর মুছে ফেলবে। আর ইস্তেঞ্জা করতে গিয়ে অজু পরিমাণ স্বল্প সময়ের মধ্যে সাবান ইত্যাদি ছাড়া স্বাভাবিক গোসল করতেও কোনো অসুবিধা নেই। (রদ্দুল মুহতার : ২/৪৪০, ২/৪৪৫, আহসানুল ফাতাওয়া : ৪/৫১৫)


 🙌জানাজা এবং যে কোনো রোগীর সেবা বিভিন্ন কারনে যদি মসজিদ থেকে বাহির হয় তাহলে সেই ব্যক্তির  ইতিকাফ ভেঙে যাবে। (ফাতাওয়া শামি : ২/২১৩)


🙌ইতিকাফ অবস্থায় মেসওয়াক অথবা ব্রাশ করার জন্য মসজিদের বাইরে যাওয়া যাবে না। গেলে ইতিকাফ ভেঙে যাবে। হ্যাঁ, অজু করার জন্য বের হলে তখন মেসওয়াকও করে নেবে। শুধু  মাএ মেসওয়াক কিংবা ব্রাশ করার মাধ্যমে যেনো কোনো বাড়তি সময় যাতে নষ্ট না হয়। (ফাতাওয়ায়ে শামি, ৩/৪৩৯) এই হিসাবে ফোনে কথা বলার জন্য হলেও  মসজিদ থেকে  কোনো ভাবে বের হওয়ার অনুমতি নেই।


🙌অসুস্থতার কারনে  হয়ে ডাক্তারের কাছে গেলেও তাহার  ইতিকাফ ভেঙে যাবে। তবে অপারগতার জন্য সে গুনাহগার হবে না। (ফাতাওয়া কাজী খান : ১/২২৩)


👊 মহিলারা ইতিকাফ কোথায় করবেঃ-


🙌নারীদের ইতিকাফের বিধান হলো রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফ পুরুষের জন্য সুন্নতে মুয়াক্কাদা আলাল কিফায়া। অর্থাৎ মহল্লার মসজিদে পুরুষদের মধ্যে একজনও যদি ইতিকাফ করে তাহলে পুরো মহল্লাবাসী দায়মুক্ত হয়ে যাবে এবং নারীদের জন্য  হলো ইতিকাফ করা মুস্তাহাব। নারীদের ইতিকাফের স্থান হলো  মহিলাদের নামাজের স্থান তাদের ঘরের  ভিতরে মসজিদ নয়।


আরো পড়ুন