১৪ই এপ্রিল বিভিন্ন দেশে যেভাবে পহেলা বৈশাখের উৎসব উদযাপন করা হয়।
পহেলা বৈশাখঃ
👺পহেলা বৈশাখ বাংলা সনের প্রথম দিন। এ দিনটি বাংলাদেশে নববর্ষ হিসেবে পালিত হয়। এটি বাঙালির একটি সর্বজনীন লোকউৎসব। এদিন আনন্দঘন পরিবেশে বরণ করে নেওয়া হয় নতুন বছরকে। কল্যাণ ও নতুন জীবনের প্রতীক হলো নববর্ষ। অতীতের ভুলত্রুটি ও ব্যর্থতার গ্লানি ভুলে নতুন করে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় উদ্যাপিত হয় নববর্ষ। এদিন সরকারি বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে।
👉এপ্রিলের ১৪ তারিখ বাংলা বর্ষপঞ্জির প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ। এই দিনটি বাংলাদেশের সবচাইতে বড় উৎসবগুলোর একটি। মুসলিম সম্প্রদায়ের দুইটি ঈদের পর পহেলা বৈশাখই দেশের সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ উদযাপন করে থাকেন।
👉কেবল বাংলাদেশই নয় দুনিয়া জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাংলা ভাষাভাষী মানুষের কাছেও দিনটি বিশেষ উদযাপনের।
👉তবে কেবল বাংলাদেশ নয় এশিয়ার আরো কয়েকটি দেশে ১৪ই এপ্রিলে নতুন বর্ষবরণের উৎসব পালন করা হয়। এর মধ্যে ভারতের কয়েকটি রাজ্য, মিয়ানমার, নেপাল, থাইল্যান্ড, শ্রীলংকা, কম্বোডিয়া এবং ভিয়েতনাম অন্যতম।
✌চলুন জেনে নেয়া যাক ১৪ই এপ্রিল কোন দেশে কেমন করে পালন হয় নতুন বছরের উদযাপনঃ
✌বাংলাদেশঃ
👉সৌর পঞ্জিকা অনুযায়ি বাংলা ১২ মাস অনেক আগে থেকেই পালন করা হয়।এই সৌর পঞ্জিকা শুরু হত হলো গ্রেগরীয় পঞ্জিকায় এপ্রিল মাসের মধ্যবর্তী সময় থেকে।
👉পহেলা বৈশাখে বিভিন্ন জায়গায় মেলা হয় যেখানে ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলার ব্যবস্থা থাকে। এখন যেমন বাংলা নতুন বছরের শুরুর দিনটি একটি সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে। এক সময় তেমন ছিল না। বাংলা নববর্ষ তখন থেকে ঋতুধর্মী উৎসব হিসেবেও উদযাপন করা হয়ে থাকে।
👉ইতিহাসবিদদের হিসাব অনুযায়ী ১৫৫৬ সাল থেকে বাংলা সন প্রবর্তন করা হয়। মুঘল সম্রাট জালালউদ্দিন মোহাম্মদ আকবর খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য তার সভার জ্যোতির্বিদ আমির ফতুল্লা শিরাজীর সহযোগিতায় ১৫৮৪ খ্রিষ্টাব্দে তারিখ-এ-এলাহি নামে নতুন একটি বছর গণনা পদ্ধতি চালু করেন। এটি কৃষকদের কাছে ফসলি সন নামে পরিচিত হয়। যা পরে বাংলা সন বা বঙ্গাব্দ নামে প্রচলিত হয়ে ওঠে। ঐ সময়ে প্রচলিত রাজকীয় সন ছিল হিজরি সন যা চন্দ্রসন হওয়ার প্রতি বছর একই মাসে খাজনা আদায় সম্ভব হতো না।বাংলা সন শূন্য থেকে শুরু হয়নি যে বছর বাংলা সন প্রবর্তন করা হয়, সে বছর হিজরি সন ছিল ৯২৩ হিজরি। সে অনুযায়ী সম্রাটের নির্দেশে প্রবর্তনের বছরই ৯২৩ বছর বয়স নিয়ে যাত্রা শুরু হয় বাংলা সনের। বাংলা বর্ষের মাসগুলোর নামকরণ হয়েছে বিভিন্ন নক্ষত্রের নামে।
👉তবে এখন যে রূপে বাংলা নববর্ষ পালন করা হয়। রাজধানী ঢাকায় ১৯৬৭ সনের আগে ঘটা করে পহেলা বৈশাখ পালনের রীতি তেমন জনপ্রিয় হয় নি। সেই সময় ঢাকায় রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ ও মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমে নতুন বছরকে বরণ করার রীতি চালু হয়। যা এখন সার্বজনীন চরিত্র লাভ করেছে।
✌মিয়ানমারঃ
👉মিয়ানমারে নববর্ষকে থিংইয়ান নামে ডাকা হয়। বার্মিজ ভাষায় থিংইয়ান এর অর্থ হলো পরিবর্তন কিংবা এক জায়গা থেকে অন্যত্র স্থানান্তর।
👉নতুন বছরের প্রথম দিনটি সাধারণত মধ্য-এপ্রিলে হয়ে থাকে। তবে ঠিক কোন নির্দিষ্ট দিনে তা পালন হবে তা হিসাব করা হয় মিয়ানমারের সৌর এবং চন্দ্র পঞ্জিকার গণনা মিলিয়ে।থিংইয়ানের দিনে বার্মা বা মিয়ানমার জুড়ে পানি উৎসব হয়। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো পানি উৎসবের একটি। দেশটির মানুষ ৫০০ বছরের বেশি সময় ধরে পালন করে আসছে এ উৎসব।নববর্ষের চারদিন আগে থেকে পানি উৎসব শুরু হয় চলে নববর্ষের দিন পর্যন্ত।দেশটির মানুষের বিশ্বাস পানি উৎসবের পানির ছোঁয়া লাগতে হবে সব মানুষের গায়ে তাতে করে সব পাপ দূর হয়ে যাবে।এপ্রিলে মিয়ানমারের তাপমাত্রা সবচেয়ে বেশি থাকে যে কারণে পানি উৎসবের জন্যে লোকজনের কষ্টের থেকে এক ধরণের শান্তিই বেশি হয়।
✌থাইল্যান্ডের সংক্রান উৎসবঃ
👉থাইল্যান্ডে নতুন বছরের প্রথম দিনটি সংক্রান উৎসব নামে পরিচিতি রয়েছে।
👉থাইল্যান্ডে মূলত এটি এপ্রিলের ১৩ তারিখে শুরু হয় কিন্তু এ উৎসব চলে ১৫ই এপ্রিল পর্যন্ত। ২০১৮ সালে থাই সরকার উৎসবের দৈর্ঘ্য ১২ই এপ্রিল থেকে ১৬ই এপ্রিল পর্যন্ত ঘোষণা করেছে।
👉এ সময়ে দেশটির সাধারণ ছুটি থাকে। থাই এবং মালয়েশিয়ান সিয়ামিজ গোত্রের মানুষেরাই মূলত ধর্মীয় রীতি মেনে এ উৎসব পালন করেন। কিন্তু উদযাপন হয় দেশজুড়ে।নববর্ষে থাইল্যান্ডে সবচেয়ে বড় আয়োজন থাকে পানি উৎসব। সারাদিন সকল বয়সের সব শ্রেণীর মানুষ এই উৎসবে অংশ গ্রহণ করেন।
আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশের সকল জাতীয় দিবস সমূহ।
✌সিনহালা নববর্ষঃ
👉সিনহালা নববর্ষকে স্থানীয়ভাবে আলুথ আবুরুদ্ধাও বলা হয়। মূলত সিনহালিজদের উৎসব হলেও দেশটির সকল মানুষ উদযাপনে সামিল হন। এইদিনে শ্রীলঙ্কায় সব জায়গায় সরকারি ছুটি থাকে।
👉শ্রীলংকাতে পহেলা বৈশাখ ১৪ই এপ্রিল উদযাপন করা হয়। এই উৎসব টানা ৭ দিন পযন্ত উদযাপন হয়।
👉এ উৎসবটিও সৌর পঞ্জিকা অনুসারে পালন করা হয়। কিন্তু ঠিক কোন দিনে পালন করা হবে দিনটি সেটি নির্ধারণ করা হয় নতুন চাঁদের হিসাবে।
আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশ স্বাস্থ্যসেবা সাধারন জ্ঞান।
👉উৎসবে নানা রকম পিঠা, মিষ্টি আর পায়েস বানানো হয়।এতে নাগরিক আয়োজনের চাইতে লোকজ বিভিন্ন খেলাধুলা আর প্রতিযোগিতার আয়োজন বেশি দেখা যায়।সবচাইতে উল্লেখযোগ্য খেলাধুলার মধ্যে রয়েছে গরুর দৌড়, ডিম খেলা। এতে হাওয়ায় ছুড়ে দেয়া ডিম লুফে নেয়ার প্রতিযোগিতা হয় ফসলি মাঠে কাদা খেলা ইত্যাদি।
✌কম্বোডিয়ার খেমার নববর্ষঃ
👉কম্বোডিয়াতে ১৪ই এপ্রিলে খেমার নববর্ষ উদযাপন করার রিতি রয়েছে।
👉দেশটিতে দিনটিকে বলা হয় চউল সানাম থামাই এর মানে নতুন বছরে প্রবেশ করা।উৎসবের শুরু হয় বৌদ্ধ মন্দিরে সকাল বেলায় ধর্মীয় আচার পালনের মধ্য দিয়ে। এরপর প্যাগোডা বা বৌদ্ধমন্দির চত্বরে ঐতিহ্যবাহী নাচের মাধ্যমে নতুন বছরকে স্বাগত জানান এই জায়গার অধিবাসীরা।
👉খেমার নববর্ষে এইখানে বিভিন্ন ধরণের খেলা এবং প্রতিযোগিতা হয়। এই খেলাগুলোর মধ্যে একটি হলো রশি কিংবা দড়ি টানাটানি খেলা। প্রায় সব এলাকার নারী-পুরুষের মধ্যে এই খেলা হয়ে থাকে।তাতে অংশ নেন বাচ্চা-বুড়ো সবাই।
✌নেপালঃ
👉নেপালের আনুষ্ঠানিক ভাবে ১৪ই এপ্রিল বর্ষ পঞ্জিকা বিক্রম সাম্বাতের প্রথম দিন হিসাবে পালন করা হয়।
👉সৌর পঞ্জিকা হলো যা মূলত অনেক পুরানো হিন্দু রীতি অনুযায়ী তৈরি করা হয়েছিল।তার আনুযায়ি নির্ধারন করা হয় কোন দিনে পালন করা হবে পহেলা বৈশাখের উৎসব।কিন্তু সাধারণত সবসময় ১৪ই এপ্রিলেই এই উৎসবটি উদযাপন করা হয়।
👉এই দিনটিতে নেপালে নববর্ষ উপলক্ষে সব জায়গাতে সরকারি ছুটি থাকে।এই দিনে দেশজুড়ে বৈশাখ উৎসব নামে এক উৎসব হয়।
👉বিভিন্ন পারিবারিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানাদি হয় দিনটিতে। উৎসবের আমেজে ভালো খাওয়া-দাওয়া, শুভেচ্ছা বিনিময় আর নানা খেলাধুলার আয়োজন করা হয়।তবে নেপালে চন্দ্রবর্ষের প্রথম দিন যার নাম সোনাম লহসারও উদযাপন করা হয়। সেদিনও সরকারি ছুটি থাকে দেশটিতে।
✌লাওসঃ
👉লাওসেও সৌর পঞ্জিকা হিসেবে পহেলা বৈশাখের প্রথম দিনটি উদযাপন করা হয়।দেশটিতে তিন দিন ধরে চলে উৎসব আনুষ্ঠানিকতা।
আরো পড়ুনঃ পর্যাপ্ত ঘুম না হলে ক্ষতি কী । এবং জেনে নিন ঘুম না হলে কী করবেন ?
✌ভারতঃ
👉ভারতে যখন ব্রিটিশদের শাসন ছিল ওই সময় থেকে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের প্রচলন শুরু হয়।কিন্তু এর বহু বছর আগে থেকেই পঞ্জিকা দেখে যেসব দিন আর ক্ষণ উদযাপন হত সেগুলো এখনো ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে পালন করা হয় এবং ইহা এই দেশটির সংস্কৃতির অংশ হয়ে দাড়িয়েছে। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বৈশাখ মাসের প্রথম দিনে পহেলা বৈশাখ পালন করা হয়।এবং হিন্দু সৌর বছরের প্রথম দিনে আসাম-পশ্চিমবঙ্গ-কেরালা-মনিপুর-উড়িষ্যা-পাঞ্জাব-তামিল নাড়ু-এবং ত্রিপুরার, সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ।
✌ভারতের বিভিন্ন জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন নামে পালন হয় বৈশাখের প্রথম দিনঃ
👉 পাঞ্জাব- বৈশাখী।
👉 কেরালা- ভিষু।
👉 আসাম- বিহু।
👉 তামিল নাড়ু- পুথান্দু।
👉উড়িষ্যা- পান সংক্রান্তি।
👉 শ্চিমবঙ্গ এবং ত্রিপুরা- পহেলা বৈশাখ।
আশা করি আমাদের প্রত্যেকটি পোষ্ট আপনাদের ভালোলাগবে এবং উপকারে আসবে ।
বিজ্ঞান থেকে আসা গুরুত্বপূর্ণ ৫০ টি প্রশ্ন/উত্তর
বাংলাদেশের সকল জাতীয় দিবস সমূহ
বাংলা ব্যাকরণ. ধ্বনিতত্ত্ব থেকে কিছু গুরত্বপূর্ণ প্রশ্ন/উত্তর
বাংলাদেশ স্বাস্থ্যসেবা সাধারন জ্ঞান
স্বামী স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ এক হলে কি কোনো সমস্যা হয় ?
স্বাস্থ্য ভালো রাখতে খাওয়ার পর যে কাজগুলো করবেন না ?
দুধ -আনারস একসাথে খেলে কি মানুষ মারা যায় ? জেনেনিন এর সঠিক উত্তর ।
পিরিয়ড চলাকালিন মেয়েরা যেসব কাজ থেকে বিরত থাকবেন ।
পর্যাপ্ত ঘুম না হলে ক্ষতি কী । এবং জেনে নিন ঘুম না হলে কী করবেন ?