আবাবিল পাখি অর্থ কি? এই পাখির বৈশিষ্ট্য,এবং পবিত্র কোরআনে এই পাখি সর্ম্পকে যা বর্ণনা করা হয়েছে !

 আবাবিল পাখি অর্থ কি? 

Any Help24


👉 আবাবিল পাখি অর্থ কি?



✌গায়ক পাখির নির্দিষ্ট ১ টি গোত্রের সকল পাখিদের সাধারণ বাংলা নাম। সাধারণত, ”হাইরানডিনিডি”  গোত্রের পাখিদের আবাবিল  পাখি বলা হয়। আবার ”পারিডি” গোত্রের পাখিরাদেরও অনেকসময় আবাবিল পাখি  বলা হয়। আবার কেবল ”হাইরানড “ গণের পাখিদেরও আবাবিল বলা হয়।



👉 আবাবিল পাখি কোথায় পাওয়া যায়ঃ- 



তবে পশ্চিম ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো উষ্ণ অঞ্চলের আবাবিলরা জন্মস্থানেই কাটিয়ে দেয়। শীতকালে বাংলাদেশে পরিযায়ী আবাবিল পাখির দেখা মিলে। খাল, হাওড়, জলাশয় কিংবা ফসলের খেতের ওপর উড়ন্ত অবস্থায় আবাবিল পাখির দেখা যায় এবং এরা  বিভিন্ন ছোট ছোট পোকা শিকার করে। প্রচলিত রয়েছে যে  আবাবিল পাখিরা নাকি কখনোই মাটিতে নেমে আসে না।



👉 আবাবিল পাখির বৈশিষ্ট্যঃ- 



হাইরানডিনিডি গোত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এদের লম্বা ও সরু পাখা এবং দ্বিধাবিভক্ত পা। আবাবিল পোকামাকড় খেয়ে জীবনধারণ করে। এদের প্রায়ই দলবদ্ধভাবে আকাশে উড়তে দেখা যায়। এরা খুব পারদর্শিতার সাথে আকাশে উড়তে পাক দিতে এবং ঘুরতে সক্ষম।



👉 আবাবিল পাখি দেখতে কেমনঃ-



মাথার উপর লালটুপি আর তারের মতো দুটো লম্বা লেজ দেখলে এদের চিনতে অসুবিধা হয় না। ভারতে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় মেঠো আবাবিল/ আবাবিল পশ্চিমবঙ্গে দেখা মেলে অথচ বাংলাদেশে খুব একটা দেখা যায় না ।



👉আবাবিল পাখির যুদ্ধঃ-  



আবাবিল  হলো ইসলাম ধর্মের মূলগ্রন্থ কুরআনের সূরা ফীলে বর্ণিত এক অলৌকিক পাখি।  যেই পাখি  কাবা ঘর  ধ্বংস করতে আসা আকসুম রাজ্যের রাজা আবরাহার  এবং তার সৈন্য বাহিনীকে ক্ষুদ্র পাথরেরঘাতে  ধ্বংস করেছিল  আবাবিল পাখির।




👉 আবাবিল পাখি  পবিত্র কোরআনে যার কথা বলা হয়েছেঃ-




 মক্কা নগরীতে অবস্থিত কাবা শরীফের ধর্মীয়  পবিত্রতায় মুগ্ধ হয়ে মানুষজন যখন দলে দলে কাবা ঘরের দিকে আসতে থাকেন তখনি ইয়েমেনের রাজা আব্রাহা ঈর্ষাণিত  হয়ে  পবিএ কাবা ঘর ধ্বংস  করার জন্য পরিকল্পনা করে।  আব্রাহা কাবা ঘর ধ্বংস  করার জন্য ৬০ হাজার সৈন্য এবং কয়েক হাজার হাতি সাথে নিয়ে মক্কার দিকে রওয়ানা হয়।




 আব্রাহা  যখন তার সৈন্য নিয়েনপবিএ কাবা ঘরের কাছাকাছি এসে পরেন ।  আল্লাহ তায়ালা ওই সময়  হাজার হাজার আবাবিল পাখি আব্রাহা এবং তার সৈন্যদের  ধ্বংস করার জন্য প্রেরণ করেন।



আরো পড়ুন




 আবাবিল পাখিগুলো আল্লাহর নির্দেশে পায়ের তালুতে দুই টি এবং মুখের মধ্যে একটি  করে পাথর নিয়ে আব্রাহার হাতি ও তার  সৈন্য বাহিনীর উপর নি'ক্ষেপ করতে থাকে এবং তাদের পুরোপুরি ধ্বং'স করে দেয়।



পবিত্র কোরআনে (সূরা আল ফীলে)  আল্লাহ তায়ালা  এই ঘটনার বর্ণনা করেন। এই  পাখি পবিত্র কাবা শরীফে এখনও দেখা যায়।



সময়টা ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দ। মক্কার পার্শ্ববর্তী ইয়েমেনের শাসক আবরাহা। আল্লাহ তাকে দিয়েছিলেন একচ্ছত্র ক্ষমতা ও শক্তি। ক্ষমতার দাপটে আবরাহার ইচ্ছা হলো ইয়েমেনের রাজধানী সানাতে সে কাবার অনুরূপ কিছু একটা তৈরি করবে। অতঃপর সারা পৃথিবী থেকে মানুষ হজ পালন করতে মক্কার পরিবর্তে সানায় যাবে। নাগরিকদের জু'লুমের মাধ্যমে অর্জিত বিপুল অর্থ এবং উন্নয়ন কর্মীর কোনো অভাব না থাকায় তা যথাসময়ে তৈরিও হয়ে গেল।



কিন্তু বাদ সাধল, সারা পৃথিবীর মানুষ। হজ পালনের জন্য তাদের ধর্মীয় পিতা ইব্রাহীম (আঃ) এর তৈরি ঘর কাবা থেকে কোনোক্রমেই সানার কাবায় যাচ্ছিল না। এতেই একসময় ক্ষে'পে যায় দো'র্দণ্ড প্রতাপশালী আবরাহা! সিদ্ধান্ত নেয় ইব্রাহীম (আঃ) এর কাবা ভেঙে ফেলতে হবে! সিদ্ধান্ত মোতাবেক  আব্রাহা  তার সৈন্য-সামন্ত নিয়ে কাবা অভিমুখে রওয়ানা হয়। সাথে নেয় হলো নয় থেকে তেরটি শক্তিশালী হাতি। 




পথিমধ্যে প্রভাবশালী কুরাইশ বংশের নেতা আবদুল মোত্তালিব  রাসূল (সাঃ) এর পিতামহ  আবরাহার পথরো'ধ করে দাঁড়ালেন। সত'র্ক করলেন আবরাহাকে। তাকে বললেন, এমন বিপ'জ্জনক কাজ থেকে বিরত থাকতে। কিন্তু ক্ষমতার দাপটে উন্ম'ত্ত আবরাহাকে থামানো গেল না। তবে যাত্রাপথে কিছুটা বি'ঘ্ন ঘটাল হাতিগুলো। হাতিগুলোর দৃষ্টি সীমানার মধ্যে পবিত্র কাবা শরিফ আসার পর তারা আর অগ্রসর হতে চাইছিল না। তাই তারা হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল। চতুর আবরাহা হাতিগুলোর অভিপ্রায় বুঝতে পেরে ওগুলোর মুখ ঘুরিয়ে অন্যমুখী করল। তারপর তাদের খাওয়াল ভালো ভালো খাবার। উপরন্তু কিছু খাবার কাবামুখী পথে ও কাবা প্রাঙ্গণেও জমা করে রাখল।



আল্লাহ তার প্রতি বিশ্বাসী বান্দাদের জন্য শিক্ষণীয় কিছু একটা দেখানোর জন্যই বোধকরি হাতিগুলোকে সেই রক্ষিত খাবারগুলোর প্রতি অনুরক্ত হওয়ার পথে আর বাদ সাধলেন না। তাই খাদ্যলোভী হাতিগুলো এবার জোর কদমেই এগোতে থাকল কাবার দিকে। মক্কার বিশ্বাসী কিন্তু দুর্বল মানুষগুলো দু-হাত তুলে ফরিয়াদ জানালেন আসমান ও জমিনের মালিক আল্লাহর কাছে। বললেন । ইয়া রাব্বুল আল-আমীন!



হে  আল্লাহ শুধু আপনি পারেন এই দানবের হাত থেকে আমাদের প্রানের পবিএ  কাবা ঘর রক্ষা করতে।




ধৈর্যশীল আল্লাহ তাঁর ধৈর্যকে আর প্রলম্বিত করলেন না। তাঁরই সৃষ্ট সর্ববৃহৎ স্থলপ্রাণী হাতির সমন্বয়ে গঠিত ও বিবিধ সমরা'স্ত্র সজ্জিত বাহিনীর বিরুদ্ধে তিনি পাঠালেন তাঁর অতি ক্ষুদ্র প্রাণী ‘আবাবিল’ পাখিকে। অ'স্ত্র হিসেবে তাদের সাথে দিলেন প্রতি পাখির হাতে-পায়ে বহনযোগ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পোড়ামাটির তৈরি শক্ত ঢিল। ঝাঁকে ঝাঁকে তারা উড়ে এলো বৃহদাকার হাতি ও সুসজ্জিত সেই বাহিনীর হাম'লা প্রতিরো'ধে, দু’হাতে ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র দু’টি ঢি'ল নিয়ে। কিছুক্ষণের মধ্যেই গবাদি পশুর খাদ্য, গমের ভুসি তুল্য বস্তুতে পরিণত হলো শক্তিশালী সেই বাহিনী ও হাতিগুলো। অতঃপর বাতাসে উড়তে লাগল সেই ভুসি! 



রক্ষা পেল পবিত্র কাবা ঘর। আর তার কিছু দিন পরই এই পৃথিবীতে সুখ ও শান্তির প্রতীক হিসেবে আগমন ঘটল আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর। পৃথিবীর মানুষগুলোর জন্য শেষ নবী হিসেবে। এটি কোনো মানুষ্য রচিত গল্প-কাহিনী নয়। নয় কোনো মতলববাজ ঐতিহাসিকের বর্ণনা। এ বর্ণনা স্বয়ং আমাদের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর।



 যিনি তা করেছেন পবিত্র সুরা-১০৫ আল-ফিলের মাধ্যমে। যেখানে কোনো এক ইস্যুতে নিরাশ রাসূল-(সাঃ) কে তিনি সান্ত্বনা-সাহস দিয়ে বলেছিলেন, ‘তুমি কি দেখনি তোমার প্রতিপালক কাবাঘর ধ্বং'স করতে আসা হাতিওয়ালাদের সাথে কী আচরণ করেছিলেন? তিনি কি তাদের চক্রা'ন্ত ন'স্যাৎ করে দেননি? তিনি তাদের বিরুদ্ধে পাঠিয়েছিলেন ঝাঁকে ঝাঁকে আবাবিল-পাখি। যারা সেই হাতিওয়ালাদের ওপর পোড়ামাটির পাথর নিক্ষে'প করেছিল। অতঃপর তিনি সেই হাতিওয়ালাদের পরিণত করেছিলেন ভ'ক্ষিত ভুসির ন্যায়।



রাত  যখন গভীর হয়  তখন চারদিকটা একদম  নিস্তব্ধ হয়ে যায়। ওই সময় এই আবাবিল পাখির ডাক অর্থাৎ কোলাহল  শুনা যায়। মসজিদের ভিতরে এবং ছাঁদে হেরেমের ভিতর এই আবাবিল পাখির সুন্দর বাসা সবার নজরে আসে।

আরো পড়ুন