ফোরাত নদী, বর্তমান নদীর অবস্থা, এবং নদী থেকে স্বর্ণের খনি
✌সিরিয়ার হালাবিয়ের নিকটে জালাবিয়েতে ফোরাত নদী
👉ফোরাত নদী এটি তুরস্কতে উৎপত্তি লাভ করে সিরিয়া ও ইরাকের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে দজলা নদীর সাথে মিলিত হয়েছে এবং শাত আল আরব নামে পারস্য উপসাগরে পতিত হয়েছে। ফোরাত ও দজলা নদীর পানি ব্যবহার করেই প্রাচীন মেসোপটেমীয় সভ্যতাগুলি বিকাশ লাভ করেছিল। গ্রিক নাম মেসোপটেমিয়া এই স্বাক্ষরই বহন করছে শব্দটির আক্ষরিক অর্থ "দুই নদীর মাঝে"। এখানেই প্রাচীন সুমেরীয়, ব্যাবিলনীয় এবং আসিরিয় সভ্যতাগুলি বিকাশ লাভ করেছিল।
👉ফোরাত নদী ২,৭০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং এর অববাহিকার আয়তন প্রায় ৪,৪০,০০০ বর্গকিলোমিটার। এর মোট অববাহিকার মাত্র ৩০% তুরস্কতে অবস্থিত হলেও এর পানির ৯০%-এর উৎস তুরস্কের উচ্চভূমি। তুরস্কের কোরাসুয়ু নদী, মুরাত নদী এবং আরও অনেকগুলি নদী পূর্ব মধ্য তুরস্কে এলাজিগ-এর কাছে মিলিত হয়ে ফোরাতর ঊর্ধ্ব অংশ গঠন করেছে। তারপর নদীটি আলাব শহরের ১২০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে সিরিয়াতে প্রবেশ করেছে। পূর্ব সিরিয়ার সাথে দক্ষিণ পূর্ব তুরস্ক থেকে আগত খাবুরনদী নামের ১টি প্রধান উপনদী মিলিত হয়েছে।
👉ফোরাত নদীর গতিপথ মূলত দজলা নদীর সমান্তরাল। নদী দুইটি ইরাকে প্রবেশের পর একে অপর থেকে সর্বোচ্চ ১০০ মাইল দূরত্ব বজায় রেখে পাশাপাশি অগ্রসর হয়েছে। উত্তর ইরাকে ফোরাত নদী আল জাজিরাহ নামের অঞ্চলের পশ্চিম সীমান্ত গঠন করেছে। অন্যদিকে তাইগ্রিস নদী এর পূর্ব সীমান্ত গঠন করেছে। দক্ষিণ-পূর্ব ইরাকে এই দুই নদীর মধ্যবর্তী অববাহিকা এলাকাটিতে প্রাচীন ব্যাবিলনীয় সভ্যতা অবস্থিত ছিল। তাইগ্রিস থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরত্বে এসে ফোরাত দুইটি শাখায় ভাগ হয়ে গেছে। শাখা দুইটি ১৮০ কিলোমিটার পরে আবার একত্রিত হয়েছে। এরপর ফোরাত ও দজলা কুরনাহ শহরের কাছে মিলিত হয়ে শাত আল আরব নদী গঠন করেছে এবং পারস্য উপসাগরে পতিত হয়েছে।
👉ফোরাতনদী ২৮০০ কোটি ঘনমিটার পানি প্রতিবছর বহন করে থাকে।এপ্রিল এবং মে এই দুই মাসে পানি ধারণের পরিমাণ সর্বোচ্চ থাকে।ফোরাত নদীর উপরে যে শহরগুলি অবস্থিত তার মধ্যে প্রধান হল সিরিয়ার রাকাহ ও দাইর আজ জর এবং ইরাকের কারবালা হিল্লাহ এবং নাজাফ।
👉ফোরাতনদীটি অগভীর বলে ছোট নৌকা ছাড়া অন্য কিছু এখানে চালনা করা সম্ভব নয়। এটি পানি সরবরাহের জন্যই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নদীটি তুরস্ক, সিরিয়া ও ইরাকের মধ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনার একটি বড় উৎস। ৩টি দেশই সেচকাজ এবং পানিবিদ্যুতের জন্যে এই নদীর পানির উপরে নির্ভরশীল। তুরস্ক গ্রামীণ উন্নয়নের জন্য ফোরাত নদীর পানির একটি বড় অংশ রেখে দেওয়ার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন।এই দক্ষিণ-পূর্ব আনাতোলিয়া প্রকল্পে ২২টি বাঁধ এবং আনাতোলীয় পর্বতমালা থেকে ফোরাতর খাড়া পতনকে কাজে লাগানোর জন্য ১৯টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়। আতাতুর্ক বাঁধ এই প্রকল্পের কেন্দ্রবিন্দু এবং এটি বিশ্বের বৃহত্তম বাঁধগুলির একটি। ১৯৯০ সালে এটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। বাঁধটির পেছনের জলাধারের পৃষ্ঠদেশের ক্ষেত্রফল ৮১৬ বর্গকিলোমিটার। ফোরাতনদীকে এক মাস ধরে বাধা দিয়ে এই জলাধারটি বারে বারে ভরে তোলা হয়।
👉কিন্তু নিম্ন অববাহিকাতে ফোরাতর জলধারার এই হ্রাস সিরিয়ার জন্য একটি বড় সমস্যা। সিরিয়া নিজে সেচ ও পানিবিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে ফোরাতনদীর উপর আল সাওরা বাঁধ নির্মাণ করেছে। ১৯৭৩ সালে উত্তর মধ্য সিরিয়াতে বাঁধটি নির্মাণ শেষ হয় এবং এর পেছনের আসাদ জলাধার নামের জলাধারের ক্ষেত্রফল প্রায় ৬৪০ বর্গকিলোমিটার। তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্ব আনাতোলিয়া প্রকল্পের কারণে বর্তমানে এটি যথেষ্ট পরিমাণে সেচের পানি ও বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না।
আরো পড়ুনঃ রমজানের বিধিবিধান ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত এবং নফল আমলসমূহ
👉একইভাবে আরও নিম্ন অববাহিকায় অবস্থিত ইরাক সিরিয়ার বাঁধের নিন্দা করেছে। ১৯৭৫ সালে দুই দেশের মধ্যে অল্পের জন্য যুদ্ধ এড়ানো সম্ভব হয়। অত্যন্ত শুষ্ক ইরাকের কৃষিকাজ ফোরাতও দজলা নদীব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল। পানির প্রবাহের তারতম্য ইরাকে খরার সৃষ্টি করে। ১৯৮৬ সালে পশ্চিম মধ্য ইরাকের আদিসা-তে পানি ধরে রাখার জন্য একটি বাঁধ নির্মাণ করা হয়, কিন্তু এটি খুব একটা কার্যকর হয়নি। ১৯৫০-এর দশক তাইগ্রিস নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের ফলে থারথার নিম্নভূমির মধ্য দিয়ে তাইগ্রিসের কিছু পানি ইউফ্রেতিস অববাহিকাতে আনা সম্ভব হয়েছে, কিন্তু এটিও পানি সরবরাহ সমস্যার তেমন সমাধান করতে পারেনি। সিরিয়া এবং তুরস্ক থেকে পানির সাথে আসা রাসায়নিক বর্জ্যবিশিষ্ট পানির কারনে ইরাকের জন্য অনেক বড় একটি সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে।
✌বর্তমান ফোরাত নদীর অবস্থা কি?
👉কিন্তু বিভিন্ন সময়ে তুরস্ক, সিরিয়া ও ইরাক সরকার এখন পর্যন্ত ১২ টি ছোট বড় বাধ নির্মাণ করার কারনে ১৯৯৯ সালের পরে ফোরাত নদীর পানি আশংকাজনক হারে কমতে শুরু করেছে। হাদীসে বলা হয়েছে, ফোরাত নদীর পানি শুকিয়ে যাবে এবং সেইখানে স্বর্নের পাহাড় আবিষ্কৃত হবে। বর্তমান অবস্থার সাথে মিলিয়ে দেখলে বুঝা যায় সেটি খুব বেশি দূরে না।
✌ফোরাত নদী থেকে স্বর্ণের খনি বের হবে
👉ফোরাত নদী হলো দক্ষিণ ও পশ্চিম এশিয়ার একটি নদী। এই নদী তুরস্কে উৎপত্তি লাভ করেছে সিরিয়া এবং ইরাকের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে এবং দজলা নদীর সাথে মিলিত হয়েছে ও পারস্য উপসাগরে গিয়ে মিলিত হয়েছে। ফোরাত নদী ও দজলা নদীর পানি ব্যবহার করেই প্রাচীন মেসোপটেমীয় সভ্যতা বিকাশ লাভ করেছিল। প্রাচীন সুমেরীয় ব্যাবিলনীয় এবং আসিরীয় সভ্যতা বিকাশ লাভ করেছিল এই নদীকে ব্যবহার করেই। ফোরাত নদী দুই হাজার ৮০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং এর অববাহিকার আয়তন প্রায় পাঁচ হাজার বর্গকিলোমিটার। এর মোট অববাহিকার মাত্র ৩০ শতাংশ তুরস্কে অবস্থিত। এর ৯০ শতাংশ পানির উৎস হলো তুরস্কের উচ্চভূমি। ফোরাত নদী গঠিত হয়েছে দুটি নদীর মিলনে। একটি কারা সু এবং অন্যটি মুরাত সু। নদীর তীরঘেঁষা প্রধান শহরগুলোর মধ্যে আছে সিরিয়ার রাক্কা ও দাইর আজ জর, ইরাকের রামাদি।
👉আঞ্চলিক রাজনীতির কারণে ফোরাত যেমন আলোচনার কেন্দ্রে তেমনি ধর্মীয় কারণেও ফোরাতের নাম মুসলিম বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। ফোরাত নিয়ে রাসুল (সাঃ) খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। এক হাদিসে রাসুল (সাঃ) বলেন, অচিরেই এমন একটা সময় আসবে ফোরাত নদীতে স্বর্ণের খনি উম্মোচিত হবে। সুতরাং যে ব্যক্তি ওই সময় বেঁচে থাকবে সে যেন স্বর্ণের খনি থেকে কোনো অংশ গ্রহণ না করে। (বুখারি হাদিস : ৭১১৯)
👉মুসলিম শরিফের বর্ণনায় এসেছে কিয়ামত সংঘটিত হবে না যতক্ষণ না ফোরাত নদীতে একটি স্বর্ণের পাহাড় প্রকাশ পাবে। মানুষ তা নিয়ে যুদ্ধে জড়াবে এবং প্রত্যেক দলের শতকরা ৯৯ জন মারা পড়বে। তাদের প্রত্যেকের কামনা থাকবে হায়! বেঁচে যাওয়া মানুষটি যদি আমিই হতাম! [মুসলিম শরিফ, হাদিস : ৭৪৫৪]
👉হাদিসের ব্যাখ্যায় শাইখুল ইসলাম তাকি উসমানি বলেন ফোরাত নদীতে স্বর্ণের পাহাড় উম্মোচিত হবে —এর দুটি অর্থ হতে পারে। এক) নদীর জায়গায় একটি পাহাড় উঠবে। যাহার ভেতরে স্বর্ণের খনি থাকবে। দুই) নদীতে স্বর্ণের খনি থাকবে। কিন্তু পাহাড়ের সাথে তুলনা করার উদ্দেশ্য হলো স্বর্ণের পরিমাণ অনেক বেশি হবে। [তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম, খণ্ড ১২, পৃষ্ঠা ২২৮]
✌ফোরাত নদী সম্পর্কে রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ
👉নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেছেন: ফরাত নদী শুকিয়ে যাওয়ার আগে কেয়ামত ঘটবে না যাতে স্বর্ণের পর্বত উন্মোচন করা যায় যার জন্য লোকেরা লড়াই করবে (যুদ্ধে) প্রতি শতের মধ্যে নিরানব্বই জন মারা যাবে, এবং প্রতিটি মানুষ মারা যাবে। তারা বলবে হয়তো আমিই একমাত্র বেঁচে আছি ।