রোজা সম্পর্কিত কোরআনের চার টি আয়াত এবং পাঁচ টি হাদিস
ইসলামের পাঁচ টি স্তম্ভের মধ্যে সিয়াম কিংবা রোজা অন্যতম একটি স্তম্ভ। হাদিসে কুদসীতে মহান আল্লাহ তায়ালা রোজার প্রতিদান নিজ হাতে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। চলমান রমজান মাস উপলক্ষ্যে আমাদের আজকের আয়োজনে রোজা সম্পর্কিত কোরআনের চার টি আয়াত এবং পাঁচ টি হাদীস উল্লেখ করা হলো।
কোরআনের চার টি আয়াত
১. হে মুমিনগণ! তোমাদের জন্যে রোযার বিধান দেওয়া হলো।যে বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীগণকে দেওয়া হয়েছিল যাতে তোমরা তাকওয়া বা আল্লাহ ভীরুতা অবলম্বন করতে পারো। [সূরা বাকারাহ_১৮৩]
২. সিয়াম নির্দিষ্ট কয়েক দিনের। তোমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে অথবা সফরে থাকলে অন্য সময় এই সংখ্যা পূর্ণ করবে। যাদের জন্য অতিশয় কষ্টদায়ক হয় তাদের কর্তব্য এর পরিবর্তে ফিদইয়া একজন অভাবগ্রস্তকে খাদ্যদান করা। যদি কেউ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সৎকাজ করে তবে তা তার পক্ষে অধিক কল্যাণকর। আর সিয়াম পালন করাই তোমাদের জন্যে অধিকতর কল্যাণকর যদি তোমরা তা জানতে। [সূরা বাকারাহ_১৮৪]
আরো পড়ুন
৩. রমাজান মাস এই মাসেই মানুষের জন্য আলোর দিশা এবং সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারীরূপে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এ মাস পাবে তারা যেন এ মাসে সিয়াম পালন করে এবং কেউ অসুস্থ্য থাকলে কিংবা সফরে থাকলে অন্য সময় এ সংখ্যা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্যে যা সহজ তাই চান এবং যা তোমাদের জন্যে কষ্টকর তা চান না। এই জন্য যে তোমাদের সংখ্যা পূর্ণ করবে ও তোমাদের সৎপথে পরিচালিত করার কারণে তোমরা আল্লাহর মাহিমা ঘোষণা করবে এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারো। [সূরা বাকারাহ-১৮৫]
৪. সিয়ামের রাতে তোমাদের জন্যে তোমাদের স্ত্রীদের বৈধ করা হয়েছে। তারা তোমাদের জন্যে এবং তোমরাও তাদের জন্যে পরিচ্ছদ। আল্লাহ জেনেছেন যে তোমরা তোমাদের নিজেদের সাথে খিয়ানত করছিলে অতঃপর তিনি তোমাদের তাওবা কবুল করেছেন এবং তোমাদেরকে মার্জনা করেছেন সুতরাং এখন তোমরা তাদের সাথে সংগত হও এবং আল্লাহ তোমাদের জন্যে যা নির্ধারণ করে রেখেছেন (অর্থাৎ সন্তান) তা অন্বেষণ করো। আর তোমরা আহার করো ও পান করো যতক্ষণ তোমাদের জন্যে (রাত্রির) কালো রেখা থেকে ফজরের সাদা রেখা স্পষ্ট হয়ে যায়। এরপর রাত পর্যন্ত সিয়াম পূর্ণ করো। আর তোমরা মসজিদে ই’তিকাফ অবস্থায় তাদের সাথে সংগত হয়ো না। এগুলো আল্লাহর (নির্ধারিত) সীমা, সুতরাং এর নিকটবর্তী হয়ো না। এভাবেই আল্লাহ মানুষের জন্যে তার আয়াতসমূহ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তারা তাকওয়া বা আল্লাহভীরুতা অবলম্বন করতে পারে। [সূরা বাকারাহ_১৮৭]
রোজা সম্পর্কে ৫টি হাদিস_
১. হযরত আবু হুরায়রা (রা:)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেছেন যে ব্যক্তি পরিপূর্ণ বিশ্বাস ও পর্যালোচনাসহ রমজান মাসের সিয়াম পালন করবে তার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী গুণাহ মাফ করে দেওয়া হবে। [সহীহ বুখারী.৩৮ সহীহ মুসলিম. ৭৬০]
২. হযরত সাহল বিন সা’দ (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সাঃ)ইরশাদ করেছেন জান্নাতের একটি দরজা আছে একে রাইয়ান বলা হয়। এই দরজা দিয়ে কিয়ামতের দিন একমাত্র সিয়াম পালনকারী ব্যক্তিরাই জান্নাতে প্রবেশ করবেন। এবং তাহাদের ছাড়া অন্য কেউ ওই দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না। সেইদিন এই বলে আহ্বান করা হবে যে সিয়াম পালনকারীগণ তোমরা কোথায়? তারা যেন এই দরজা দিয়ে প্রবেশ করে।এই ভাবেই সকল রোযা পালনকারী সেই দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করার পরে জান্নাতের দরজাটি বন্ধ করে দেওয়া হবে। তারপরে এই পথে আর কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। [সহীহ বুখারী. ১৮৯৬ সহীহ মুসলিম. ১১৫২]
রমজান মাসে কি কি করনীয়! ও ইফতারের দোয়া।
৩. হযরত আবু হুরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)ইরশাদ করেছেন সিয়াম ঢালস্বরূপ। তোমাদের কেউ কোনোদিন সিয়াম পালন করলে তার মুখ থেকে যেন অশ্লীল কথা বের না হয়। কেউ যদি তাকে গালমন্দ করে কিংবা ঝগড়ায় প্ররোচিত করতে চায় তাহলে রোযাদার ব্যক্তি যেন বলে যে আমি সিয়াম পালনকারী। [সহীহ বুখারী. ১৮৯৪ সহীহ মুসলিম.১১৫১]
৪.হযরত আবু হুরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সাঃ)ইরশাদ করেন আল্লাহ তায়ালা বলেছেন সিয়াম ব্যতীত আদম সন্তানের প্রতিটি কাজই তার নিজের জন্য। কিন্তু সিয়াম আমার জন্য এবং আমিই এর প্রতিদান দেব। সিয়াম ঢালস্বরূপ। তোমাদের কেউ যেন সিয়াম পালনের দিন অশ্লীলতায় লিপ্ত না হয় এবং ঝগড়া বিবাদ না করে। যদি কেউ তাকে গালি দেয় অথবা তার সঙ্গে ঝগড়া করে তাহলে সে যেন বলে আমি রোযা পালনকারী। যার হাতে মুহাম্মদের প্রাণ তার শপথ! অবশ্যই রোযা পালনকারীর মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মিসকের গন্ধের চেয়েও অনেক বেশি সুগন্ধি।রোযা পালনকারীর জন্য রয়েছে ২ টি খুশি যা তাকে খুশি করবে। যখন যে ইফতার করে সে খুশি হয় । এবং যখন সে তার প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাৎ করবে তখন সাওমের বিনিময়ে অনেক বেশি আনন্দিত হবেন।[সহীহ বুখারী. ১৯০৪ সহীহ মুসলিম. ১১৫১]
৫. হযরত আবু হুরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন তোমাদের নিকট রমজান মাস উপস্থিত। এটা এক অত্যন্ত বরকতময় মাস। আল্লাহ তা’য়ালা এ মাসে তোমাদের প্রতি সাওম ফরজ করেছেন। এ মাসে আকাশের দরজাসমূহ উন্মুক্ত হয়ে যায় এ মাসে জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং এ মাসে বড় বড় শয়তানগুলোকে আটক রাখা হয়। আল্লাহর জন্যে এ মাসে একটি রাত আছে যা হাজার মাসের চেয়েও অনেক উত্তম। যে লোক এ রাত্রির মহা কল্যাণলাভ হতে বঞ্চিত থাকল সে সত্যিই বঞ্চিত ব্যক্তি। [সুনানুন নাসায়ী. ২১০৬]