👈👉নামাজ বা সালাত ইসলাম ধর্মের একটি দৈনিক নিয়মিত ইবাদত।
👳একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে নামাজ আদায় করতে হয় যা কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত আছে। এটি মুসলমানদের জন্য প্রতিদিন অবশ্যকরণীয় একটি ধর্মীয় কাজ। তবে প্রতিদিন আবশ্যকরণীয় বা ফরজ ছাড়াও বিবিধ নামাজ রয়েছে যা সময়ভিত্তিক কিংবা বিষয়ভিত্তিক। সালাত একটি সুনির্দিষ্ট প্রকৃতির ইবাদত যার পদ্ধতি ইসলামী শরীআতে পরিপূর্ণভাবে বর্ণিত হয়েছে। নামাজ তাকবিরে তাহরিমা দ্বারা শুরু হয় ও সালাম ফিরানো দ্বারা শেষ হয়।
নামাজ (সালাত) ইসলামের পাঁচটি রোকনের মধ্যে দ্বিতীয় রোকন৷ নামাজ প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক এবং বুদ্ধি জ্ঞান সম্পন্ন নারী বা পুরুষ নির্বিশেষে প্রতিটি মুসলিমের জন্য ফরজ বা অবশ্যকরণীয়।
নামাজের ইতিহাসঃ
ইসলামের বিভিন্ন বর্ণনা অনুযায়ী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) ৬১০ খ্রিষ্টাব্দে ৪০ বছর বয়সে নবুয়ত লাভ করেন ও অব্যবহিত পরে সূরা মু’মিন এর ৫৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহর পক্ষ থেকে সকাল এবং সন্ধ্যায় দৈনিক দুই ওয়াক্ত নামাজ মুসলিমদের জন্য ফরজ হওয়ার নির্দেশনা লাভ করেন। তিনি ৬১৪ খ্রিষ্টাব্দে সকাল সন্ধ্যা ও দুপুরে দৈনিক তিন ওয়াক্ত নামাজের আদেশ লাভ করেন। ৬১৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৭শে রজব তারিখে মিরাজের সময় পাঁচওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। উল্লেখ্য যে এ সময় যুহর, আসর ও ইশা ২ রাকাত পড়ার বিধান ছিল। ৬২৩ খ্রিষ্টাব্দে আল্লাহর তরফ থেকে ২ রাকাত বিশিষ্ট যুহর, আসর এবং ইশাকে ৪ রাকাত করে পড়ার আদেশ দেয়া হয়।
নামাজের শর্তঃ
কোনো ব্যক্তির উপরে নামাজ ফরজ কিংবা অবশ্যকরণীয় হওয়ার জন্য শর্তগুলো হলোঃ
২)সাবালক হওয়া
৩) সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ হওয়া।
নামাজ বৈধ হওয়ার সংঘটিত পাঁচটি কারণ হলোঃ
১)নামাজের ওয়াক্ত সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে অনিশ্চিত হলে নামাজ হবে না। যদি ওই নামাজ ঠিক ওয়াক্তেও হয়।
২)কেবলামুখী হয়ে দাঁড়ানো। তবে অসুস্থ এবং অপারগ ব্যক্তির জন্য এই শর্ত শিথিলযোগ্য।
৩)সতর ঢাকা থাকতে হবে। পুরুষের সতর হল নাভির উপর থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত এবং নারীর সতর হল মুখমণ্ডল, দুই হাতের কব্জি এবং দুই পায়ের পাতা ব্যতীত সারা শরীর।
৪)পরিধেয় কাপড় শরীর এবং নামাজের স্থান পরিষ্কার পাক-পবিত্র হতে হবে।
৫) নামাজের জন্য অযু গোসল কিংবা তায়াম্মুমের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করতে হবে।
নামাজ কবুল হওয়ার শর্তঃ
১) ঈমান-আকীদা সহীহ শুদ্ধ হওয়া
২) শিরকমুক্ত হওয়া
৩) বিদআতমুক্ত হওয়া
৪) মুনাফেকীমুক্ত হওয়া
৫) হারাম উপার্জন বর্জন করা
৬) সৃষ্টির ফরজ হক্ক (হাক্কুল ইবাদ) আদায় করা ও বান্দার হক্ক নষ্ট না করা
নামাজের নিয়মঃ
নামাজের প্রধান ধাপগুলোকে রাকাত বলা হয়। নামাজ দুই বা তিন বা চার রাকাত হতে পারে। ইসলামের বিভিন্ন সম্প্রদায়ে নামাজ পড়ার রীতিতে কিছু পার্থক্য রয়েছেঃ শিয়া ও সুন্নি পার্থক্য পাশাপাশি সুন্নিদের মধ্যে মাজহাবী পার্থক্য এবং লা-মাজহাবী আহলে হাদীস বা সালাফী পার্থক্য।
নামাজ আরবিতে পড়ার কারণঃ
১) আরবি হল একটি গভীর ও বিস্তৃত ভাষা
২) নামাজের জন্য একটি সাধারণ ও সার্বজনীন ভাষা ৩)ইসলামী ভ্রাতৃত্বে সংযোগ স্থাপন।
৪) কুরআন হল আল্লাহর সৃজনকর্ম
৫) কুরআনের পূর্নাঙ্গ ও পরিপূর্ণ অনুবাদ করা অসম্ভব
৬) কুরআনই একমাত্র সংরক্ষিত ওহী
৭) কুরআনের নিজস্ব ছন্দ রয়েছে
দোয়া এবং নামাজের পার্থক্য হলোঃ
দোয়া হল আমন্ত্রণ কিংবা মিনতি যা ইচ্ছা তাই চাইতে পাড়বেন এবং তা যে কোন ভাষায় করা যায়।এবং নামাজ হলো প্রার্থনা যা বাধ্যতামূলক এবং তার নীতিমালা অনেক কঠোর। এছাড়াও জামাতে ফরজ নামাজের জন্যে মুসলিমদের সামাজিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত রাখার বাধ্যবাধকতাও রয়েছে এই কারনে নামাজ শুধু আরবিতেই পড়তে হয়।
আরবি নামাজ বুঝতে শেখা তেমন কঠিন কিছু না বরং তা অনেকটা সহজ।
সবশেষে তিনি বলেন এইভাবে আমরা দেখতে পাই যে নামাজের মাধুর্য. মর্যাদা. সৌন্দর্য ও আধ্যাত্মিকতা মূল আরবীতে নামাজ পড়ার উপর নির্ভর করে ও যদি অনুবাদে নামাজ পড়া হয় তাহলে কুরআনের সাহিত্যিক এবং শৈল্পিক মূল্যবোধ হারিয়ে যেতে পারে এবং অনূদিত নামাজের ফলে সর্বপ্রথম ক্ষতিগ্রস্ত হবে ইসলামী ভ্রাতৃত্ব।
নামাজের ফরজঃ
নামাজের মোট ফরজ ১৩ টি। আহকাম হলো ৭ টি। এবং আরকান ৬ টি। নামাজের বাহিরে যে কাজগুলি করা হয় তাকে আহকাম বলে।এবং নামাজের ভিতরের যে কাজগুলো করা হয় আরকান বলে।
নামাজের আহকামঃ
- শরীর পবিত্র হওয়া।
- কাপড় বা বস্ত্র পবিত্র হওয়া।
- নামাজের জায়গা পবিত্র হওয়া।
- সতর ঢেকে রাখা।
- কিবলামুখী হওয়া।
- ওয়াক্তমত নামাজ আদায় করা
- নামাজের নিয়্যত করা।
নামাজের আরকানঃ
১) তাকবীরে তাহরীমা অর্থাৎ(আল্লাহু আকবার) বলে ২)নামাজ শুরু করতে হবে।
৩) দাঁড়িয়ে নামাজ পড়া।
৪) সুরা ফাতিহার সাথে কুরআন পড়া।
৫) রুকু করা।
৬) দু্ই সিজদা করা।
৭) শেষ বৈঠক করা।
নামাজের ওয়াক্ত ও রাকাতঃ
১) ফযর
২) যোহর
৩) আসর
৪) মাগরিব
৫) ইশা
প্রতিদিন একজন মুসলিমকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে হয়। প্রথম ওয়াক্তের হলো (ফজর নামাজ) যা সুবহে সাদিক থেকে শুরু করে সূর্যোদয়ের আগে পর্যন্ত । এরপরে হলো (যুহর ওয়াক্ত) বেলা দ্বিপ্রহর হতে শুরু করে (আসর ওয়াক্ত) এর আগে পর্যন্ত । তৃতীয় ওয়াক্ত (আসর ওয়াক্ত) যা সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত পড়া যায়। চতুর্থ ওয়াক্ত হচ্ছে (মাগরিব ওয়াক্ত) যা সূর্যাস্তের ঠিক পর পরই আরম্ভ হয় এবং এর ব্যপ্তিকাল প্রায় ৩০-৪৫ মিনিট। মাগরিব ওয়াক্ত এর প্রায় ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিট পর আরম্ভ হয় (ইশা ওয়াক্ত) এবং এর ব্যপ্তি প্রায় (ফজর ওয়াক্ত) এর আগ পর্যন্ত।
প্রতিদিন পাঁচ টি ফরজ নামাজ ছাড়া ইশা'র নামাজের পর বিতর নামাজ আদায় করা ওয়াজিব। এছাড়া আরো বেশকিছু নামাজ আসে সুন্নত নামাজ ও মুসলিমরা আদায় করে থাকেন।
সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) প্রতিদিন এ নামাজগুলো পড়তেন।
শুক্রবারে জুমা যুহর নামাজের পরিবর্তে পড়তে হয়।
এশা নামাজ আদায় করার পরে বিতর এর ওয়াজিব নামাজ আদায় করতে হয়।
অন্যান্য নামাজঃ
নামাজের মধ্যে মূল হলো ফরয নামাজ ৷ এফরজ নামাজ ব্যতিত মুসলমানগন আরো অন্য কিছু নামাজ আদায় করে থাকেন। তবে শ্রেণিবিভাগ অনুসারে ফরয ছাড়া অন্য যত নামাজ আছে সেই নামাজ ৩ ভাগে ভাগ হয়েছে তা হলো
১) ওয়াজিব
২) সুন্নাত
৩) নফল নামাজ
ওয়াজিব নামাজঃ
নিয়মিত ওয়াজিব নামাজ হলো বিতর নামাজ তবে বিতর নামাজ আমাদের মাযহাবে ওয়াজিব নামাজ বলে বিতর গন্য করা হয়। প্রত্যেকদিন এশার নামাজের পর হতে সুবহে সাদিক পর্যন্ত এই ওয়াজিব নামাজের সময় থাকে। এছাড়া কোন নফল নামাজের নিয়ত করে নামাজ শুরু করলে তা আদায় করা ওয়াজিব হয়ে যায়। এছাড়া দুই ঈদের নামাজ আদায় করাও ওয়াজিব ।
সুন্নাত নামাজঃ
সুন্নাত নামাজ
নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) যেই নামাজগুলো আদায় করতেন তাকে সুন্নাত নামাজ বলে।
সুন্নাত নামাজ দুই প্রকার।
১. সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ
২. সুন্নাতে যায়েদাহ
সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ বলতে ঐসব নামাজকে বুঝায়, যেগুলো নবী (সাঃ) নিয়মিত আদায় করতেন। কখনো পরিত্যাগ করতেন না ৷
সুন্নাতে যায়েদাহ বলতে বুঝায়, ইসলামের নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) যেসব সুন্নাত নিয়মিত আদায় করতেন না। বরং প্রায় সময় আদায় করতেন ৷
নফল নামাজঃ
নফল নামাজ হলো এক প্রকার ঐচ্ছিক নামাজ। যে সময় নামাজ পড়া নিষিদ্ধ সেই সময় ব্যতিত অন্য যেকোন সময়ে এই নামাজ আদায় করা যায় ৷
নফল নামাজ সাধারণত আদায় করতে হয় ২ রাকাত করে।
জানাযার নামাজঃ
জানাযা হলো এমন একটি বিশেষ প্রার্থনা যা কোনো মৃত মুসলমানকে কবর দেয়ার আগে অনুষ্ঠিত হয়। ইসলামের ভাষায় এহা জানাযার নামাজ নামে পরিচিত । অর্থাৎ ইসলাম ধর্মামলম্বীদের জন্য জানাজা নামাজ হলো ফরযে কেফায়া ৷ সমাজের মুসলমানদের জন্য আবশ্যকীয় দায়িত্ব হলো কোনো মুসলমানের মৃত্যু বরণ করলে তাকে দাফন করার পূর্বে অবশ্যই জানাযার নামাজ আদায় করতে হবে। তবে কোনো এলাকা বা গোত্রের পক্ষ থেকে কয়েকজন আদায় করলে সবার পক্ষ থেকে এই নামাজ আদায় হয়ে যায়।
জানাযার নামাজ একজন ইমামের নেতৃত্বে জামাতের সাথে দলবদ্ধভাবে হয়। অংশগ্রহণকারীরা কাতারবদ্ধ বা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে এ নামায আদায় করেন। এটি ৪ তকবিরের সাথে আদায় করতে হয়। দাঁড়িয়ে এ নামাজ আদায় করতে হয় ৷ জানাযা নামাজ শেষ হওয়ার পরে মৃতব্যক্তিকে অবিলম্বে গোরস্থানে নিয়ে যেতে হয়। এবং ইসলামী নিয়মে কবর তৈরী করে মৃতব্যক্তিকে দাফন করতে হয়।
ইসলামে নামাজের গুরুত্বঃ
নামাজ ইসলামের ৫ টি রোকন মধ্যে দ্বিতীয় রোকন৷ এই বিষয়ে ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন যে আমি রাসুল (সঃ) কে বলতে শুনেছি— ইসলামের মূল ভিত্তি ৫ টি হলোঃ
১) লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ এর সাক্ষ্য প্রদান করা।
২) সালাত কায়েম করা
৩) যাকাত আদায় করা
৪) রমজান মাসের রোজা পালন করা
৫) সামর্থ থাকলে হজ্বব্রত পালন করা ৷
অন্য হাদিসে রাসুল (সঃ) বলেন যে দ্বীনের মূল বিষয় হচ্ছে ইসলাম এবং মূল স্তম্ভ হচ্ছে নামাজ ও তার সর্বোচ্চ উঁচু স্তর হলো জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ ৷ (তিরমিযী সহিহ মুসলিম.মুসনাদে আহমাদ)।
অন্য আরেক হাদিসে এসেছে যে আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে তিনি আল্লাহ্র রসূল (সঃ) কে বলতে শুনেছেন যে যদি তোমাদের কারো বাড়ির সামনে একটি নদী থাকে আর সে তাতে প্রতিদিন ৫ বার গোসল করে তাহলে কি তার শরীরে কোন ময়লা থাকবে॥ তারা বললেন তাঁর দেহে কোনরূপ কোনো ময়লা থাকবে না। আল্লাহ্র রসূল (সঃ) বললেন এ হলো ৫ ওয়াক্ত নামাজের উদহারণ। এর মাধ্যমে আল্লাহ্ তাআলা বান্দার সকল গুনাহসমুহ মাফ করে দেন । (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫২৮)