লাইলাতুল মেরাজ বা শবে মেরাজের ইসলামিক ইতিকথা।

লাইলাতুল মেরাজ বা শবে মেরাজ

Any Help24




 শবেমেরাজ গুরুত্ব

📗ইসলাম ধর্মমতে লাইলাতুল মেরাজ বা মেরাজের রাত (যা সচরাচর শবেমেরাজ নামে অধিকতর পরিচিত) হচ্ছে যে রাতে ইসলামের নবি মুহাম্মদ (সা:) ঐশ্বরিক উপায়ে ঊর্ধ্বাকাশে আরোহণ করেছিলেন এবং স্রষ্টার সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন। অনেক মুসলমান এবাদত বন্দেগির মধ্য দিয়ে এই রাতটি উদ্‌যাপন করেন।


📃 আবার অনেক মুসলমান এই রাত উদ্‌যাপন করেন না বরং এই রাত উদ্‌যাপন করাকে বিদআত বলেন। ইসলামে মেরাজের বিশেষ গুরুত্ব আছে, কেননা এই মেরাজের মাধ্যমেই ইসলাম ধর্মের পঞ্চস্তম্ভের দ্বিতীয় স্তম্ভ অর্থাৎ নামাজ, মুসলমানদের জন্য অত্যাবশ্যক (ফরজ) করা হয় এবং এই রাতেই দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কায়েম করার বিধি মুসলমানদের জন্য নিয়ে আসেন নবি মুহাম্মদ (সা:)।


নবিজীর/ ইসলামের ইতিহাস বা মেরাজের ঘটনা


মেরাজ শব্দের অর্থ


📘ইসলামের ইতিহাস-অনুযায়ী মুহাম্মাদের (সা:) নবুওয়াতের দশম বৎসরে (৬২০ খ্রিষ্টাব্দ) রজব মাসের ২৬ তারিখের দিবাগত রাতে ইসলামের নবি মুহাম্মাদ (সা:) প্রথমে কাবা শরিফ থেকে জেরুজালেমে অবস্থিত বায়তুল মুকাদ্দাস বা মসজিদুল আকসায় গমন করেন এবং সেখানে তিনি নবিদের জামায়াতে ইমামতি করেন।


📄 অতঃপর তিনি বোরাক নামক বিশেষ বাহনে আসীন হয়ে ঊর্ধ্বলোকে গমন করেন। ঊর্ধ্বাকাশে সিদরাতুল মুনতাহায় তিনি আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ করেন। নবি মুহাম্মদ (সা:) এর আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করার আগ পর্যন্ত এই সফরে ফেরেশতা জিবরাইল তার সফরসঙ্গী ছিলেন। কুরআন শরিফের সুরা বনি ইসরাঈল এর প্রথম আয়াতে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে। 


📙"পবিত্র মহান সে সত্তা, যিনি তার বান্দাকে রাতে নিয়ে গিয়েছেন আল মাসজিদুল হারাম থেকে আল মাসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার আশপাশে আমি বরকত দিয়েছি, যেন আমি তাকে আমার কিছু নিদর্শন দেখাতে পারি। তিনিই সর্বশ্রোতা -সর্বদ্রষ্টা। [কুরআন ১৭:১]


শব্দগত ব্যুৎপত্তি


📋যদিও ইসলাম ধর্মের মূল ধর্মগ্রন্থ কুরআন-এ "মেরাজ" শব্দটির সরাসরি উল্লেখ দেখা যায় না, কিন্তু যখন অবিশ্বাসীগণ মুহাম্মাদ (সা:)-এর নবুয়্যতের বা ঐশ্বিক বাণীর প্রমাণস্বরূপ স্বর্গে আরোহণ করার প্রমাণ আনতে বলে, তখন সেখানে উল্লিখিত শব্দ ছিল তারকা ফিস সামা-য়ী: স্বর্গে আরোহণ করো।


 👪কেউ কেউ বলে, তারকা মানে আরোহণ করো, আর শব্দটি রাকিয়া থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ "সে আরোহণ করেছিল"। আরবি মেরাজ শব্দটি আরাজা থেকে গৃহীত, যার অর্থ সে আরোহণ করেছিল। তারা আরও বলে শব্দ দুটির মধ্যে পার্থক্য হলো রাকিয়া দ্বারা দৈহিক আরোহণ বোঝায়, আর আরাজা দ্বারা আত্মিক আরোহণ বোঝায়। তাই তাদের মতে, মেরাজ হল "আত্মিক আরোহণ ।


 👭কিন্তু আহলুস সুন্নাহর আলেমগণের মতে মেরাজ সশরীরে ও জাগ্রত অবস্থায় হয়েছিল। কারণ সকল সাহাবা, তাবেয়িন ও তাবে-তাবেয়িগণ এটিই বিশ্বাস করতেন।


 মেরাজের  আলোচনা/ বিবরণ


📖হজর অঞ্চলে তৈয়ারি (বড় বড়) মটকার ন্যায় ও তার পাতা হাতীর কানের ন্যায়। জিবরাইল আমাকে বললেন। এই বৃক্ষটির নাম (সিদরাতুল মুনতাহা)। তথায় চারটি প্রবহমান নদী দেখতে পেলাম  ২ টি ভিতরের দিকে প্রবাহিত ও ২ টি বাহিরের দিকে। নদীগুলোর নাম সম্পর্কে আমি জিবরাইলকে জিজ্ঞাসা করলাম। 


📜তিনি বললেন. ভিতরের ২ টি বেহেশতে প্রবহমান (সালসাবিল এবং কাওসার নামক) ২ টি নদী। আর বাহিরের দিকে প্রবহমান ২ টি হল (ভূ-পৃষ্ঠের মিসরে প্রবাহিত) নীল ও (ইরাকে প্রবাহিত) ফোরাত নদী কিংবা  তাদের নামের মূল উৎস । তারপরে আমাকে বায়তুল মা’মুর পরিদর্শন করানে হলো। 


📜সেই খানে  প্রতিদিন এবাদতের জন্য  সত্তর হাজার ফেরেশতা উপস্থিত হয়ে থাকেন। এবং যে দল এক দিন ইবাদতের  সুযোগ  পায় সেই দল চিরকালের জন্য দ্বিতীয় দিন  আর তাদের সুযোগ  হয় না ।


আরো পড়ুনঃ তাকদ্বীর এর পরিচিতি


👉অতঃপর আমার সৃষ্টিগত স্বভাবের স্বচ্ছতা এবং নির্মলতা প্রকাশ করে দেখানোর  উদ্দেশে পরীক্ষার জন্য আমার সম্মুখে ৩ টি পাত্র উপস্থিত করা হল। ১ টিতে ছিল সুরা কিংবা  মদ,অপরটিতে  দুগ্ধ,এবং অন্য  আরেকটিতে মধু আমি দুগ্ধের পাত্রটি গ্রহণ করলাম। জিবরাইল(আ:) বললেন, দুগ্ধ সত্য এবং  খাঁটি স্বভাগত ধর্ম ইসলামের স্বরুপ; (সুতরাং, আপনি দুগ্ধের পাত্র গ্রহণ করে এটাই প্রমাণ করেছেন যে,) আপনি সত্যও স্বভাবগত ধর্ম ইসলামের উপরে প্রতিষ্ঠিত আছেন ও আপনার উসিলায় আপনার উম্মতগনও তার উপর থাকবে।


📜তারপরে আমার শরিয়তে প্রত্যেক দিন ৫০ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার বিধান করা হলেন। আমি ফেরার সময়  মুসা (আ.) এর নিকটবর্তী পথ অতিক্রম করা কালে তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন। বিশেষ আদেশ কী লাভ করেছেন,  আমি বললাম  ৫০ ওয়াক্ত নামাজ। 


📖মুসা (আ.) বললেন  আপনার উম্মত প্রতিদ্ন ৫০ ওয়াক্ত নমায আদায় করে যাইতে সক্ষম হবেনা। আমি সাধারণ মানুষের স্বভাব সম্পর্কে অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি ও  বণী ইস্রাঈল গণকে বিশেষভাবে পরীক্ষাও করেছি। সুতরাং আপনি পরওয়ারদেগারের দরবারে আপনার উম্মতের জন্য এই আদেশ আরও সহজ করার আবেদন করুন। হযরত বলেন, আমি পরওয়ারদেগারের খাস দরবারে ফিরে গেলাম।


 📖পরওয়ারদেগার  দুইবারে পাঁচ পাঁচ করে দশ ওয়াক্ত কম করে দিলেন। অত:পর আমি আবার মূসার (আ.)নিকট পৌছালাম তিনি  আমাকে পূর্বের ন্যায় পরামর্শই আমাকে দিলেন। আমি. পরওয়ারদেগারের দরবারে ফিরে গেলাম এইবারও ঐরূপ' দশ ওয়াক্ত কম করে দিলেন। পুনরায় মূসার নিকট পৌছালে তিনি আমাকে এইবারও সেই পরামর্শই দিলেন। আমি পরওয়ারদেগারের দরবারে ফিরে গেলাম এবং পূর্বের ন্যায় দশ ওয়াক্ত কম করে দিলেন । 


📖এইবারও মূসা (আ:)এর নিকট পৌছালে পর তিনি আমাকে পূর্বের ন্যায় পরামর্শ দিলেন। আমি পরওয়ারদেগারের দরবারে ফিরে গেলাম।এইবার আমার জন্য প্রতি দিন পাঁচ ওয়াক্ত নির্দিষ্ট করে দেওয়া হল । এইবারও মূসার(আ.) নিকট পৌছালেন তার  পর আমাকে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন।


আরো পড়ুনঃজানাজার নামাজ কি? পড়ার নিয়ম-কানুন এবং দোয়া।


  📖কি আদেশ লাভ করেছেন "  আমি বললাম, প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের আদেশ প্রদান করা হয়েছে। মূসা বললেন, আপনার উম্মত প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাযেরও পাবন্দী করতে পারবে না। আমি আপনার পুর্বেই সাধারণ মানুষের স্বাভাব সম্পর্কে অভিজ্ঞতা লাভ করেছি ও বনী ইস্রাঈলগণকে অনেক পরীক্ষা করেছি। 


📖আপনি আবার পরওয়ারদেগারের দরবারে ফিরে আরও কম করার আবেদন জানান। হযরত বলেন, আমি মুসাকে বললাম, পরওয়ারদেগারের দরবারে অনেক বার আসা-যাওয়া করেছি  এখন আবার যাইতে লজ্জা বোধ হয়। আর যাব না বরং পাঁচ ওয়াক্তের উপরই সন্তুষ্ট থাকলাম ও  তা বরণ করে নিলাম। 


📖হযরত বলেন  অতপর যখন আমি ফেরার পথের দিকে  অগ্রসর হলাম তখন আল্লাহ তাআলার তরফ হতে একটি ঘোষণা জারি করা হল। বান্দাদের প্রাপ্য সওয়াবের দিক দিয়ে   আমার নির্ধারিত সংখ্যা (পঞ্চাশ) বাকী রাখিলাম  আমার পক্ষে আমার বাক্য অপরিবর্তিতই থাকবে 


📖অবশ্য কর্মক্ষেত্রে বান্দাদের পক্ষে সহজ এবং  কম করে দিলাম । (অর্থাৎ কর্মক্ষেত্রে পাঁচ ওয়াক্ত থাকল  কিন্তু সওয়াবের দিক দিয়ে পাঁচই পঞ্চাশ গণ্য হবে। প্রতিটি নেক আমলে দশ ণ্ডণ সওয়াব দান করব। 


ফলাফল

📖মেরাজের ফলে মুসলমানদের জন্য প্রতিদিন   পাঁচবার পাঁচটি নির্দিষ্ট সময়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করা ফরজ হয়।


ইব্রাহিমীয় মেরাজ

📖ইসলাম ধর্মমতে  ঐশ্বিক সান্নিধ্যের একটা  ঘটনা ঘটেছিল ইব্রাহিম(আ:) এবং মুসার(আ:) ক্ষেত্রেও।


ভিন্ন মত

✋কোনো কোনো ইসলামী চিন্তাবিদের মতে, এটা দৈহিক নয়, বরং ছিল আত্মিক আরোহণ  মুহাম্মদের স্ত্রী আয়েশা (রা:)এবং আবু সুফিয়ান (রা:)এই মতে বিশ্বাসী ছিলেন বলা হয়। অনেক আলেমগণের মতে, (হযরত আয়েশা রা. এর থেকে যে কথা বর্ণনা করা হয় তা সত্য নয়)। বর্ণনাটির সনদ অনির্ভরযোগ্য।


📖মেরাজের ঘটনা ইসলামে যথেষ্ট অর্থবহ তারপরেও মেরাজ উপলক্ষে বিশেষ রাত উৎযাপনের নিয়ম কে ইসলামী চিন্তাবিদগণরা গ্রহণ করে না।  অধিকাংশ সব  ইসলামিক স্কলার মিরাজ রজনী উপলক্ষে শরীয়ত সম্মত যে কোন ইবাদাত করার ব্যাপারে মত দিয়েছেন এবং  উত্তম বলেছেন।


আশা করি আমাদের প্রত্যেকটি পোষ্ট আপনাদের ভালোলাগবে এবং উপকারে আসবে ।

আরো পড়ুন