হিট স্ট্রোক
♨গরমের সময় খুবই সাধারন একটি রোগের নাম। আমাদের দেশে এপ্রিল থেকে জুন/জুলাই মাস পর্যন্ত মানুষের মধ্যে এই রোগটি আকস্মিকভাবে ঘটার সম্ভাবনা দেখা দেয়। যেহেতু এই অসুখটি প্রায় না বলে কয়েই হানা দেয় সেহেতু এর সম্পর্কে ধারণা থাকলে খুব সহজেই সেই পরিস্থিতি সামলানো সম্ভব। চলুন আজকে হিট স্ট্রোক কী, কাদের বেশি হয়,এর কারণ, লক্ষণ ও উপসর্গ এর প্রাথমিক চিকিৎসা,প্রতিকার সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া যাক!
হিট স্ট্রোক-এর কারণ, লক্ষণ ও এর প্রাথমিক চিকিৎসা
হিট স্ট্রোক কী?
🎯হিট স্ট্রোক (Heat stroke) বা সান স্ট্রোক (sun stroke) এক ধরনের অসুস্থতা, যা অত্যধিক গরমের কারণে হয়ে থাকে। এই অসুখে শরীরের তাপমাত্রা ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট-এর বেশি এবং এর সাথে শারীরিক ও মানসিক ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়।
😅যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছরে প্রায় ৬০০ জনেরও বেশি মানুষ হিট স্ট্রোক-এ মারা যায়। তবে অনেক সময় এটি ধীরে ধীরে ঘটে থাকে, যদিও হঠাৎ করে ঘটার সম্ভাবনাই অনেক বেশি থাকে। আমাদের দেশেও এই রোগ বর্তমানে প্রায়ই দেখা যায়। কারণ প্রতিনিয়তই পরিবেশের তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে।
হিট স্ট্রোক কাদের বেশি হয়?
😅প্রচণ্ড গরমে ও আর্দ্রতায় যে কারোও হিট স্ট্রোক হতে পারে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে হিট স্ট্রোকের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
যেমনঃ—
- শিশু ও বৃদ্ধদের তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা কম থাকায় হিট স্ট্রোকের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। এ ছাড়া বয়স্ক ব্যক্তিরা যেহেতু প্রায়ই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয় কিংবা নানা ওষুধ সেবন করেন, যা হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়।
- যাঁরা দিনের বেলায় প্রচণ্ড রোদে শারীরিক পরিশ্রম করেন, তাঁদের হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি থাকে । যেমন কৃষক, শ্রমিক ও রিকশাচালক।
- শরীরে পানিস্বল্পতা হলে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
- কিছু কিছু ওষুধ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায় বিশেষ করে প্রস্রাব বাড়ানোর ওষুধ, বিষ্ণনতার ওষুধ, মানসিক রোগের ওষুধ ইত্যাদি।
হিট স্ট্রোক হবার কারণঃ
হিট স্ট্রোক এর কয়েকটি কারণে হতে পারে। তবে চলুন এবার জেনে আসি কারণগুলোঃ-
- পারিপার্শ্বিক উচ্চ তাপমাত্রা।
- শরীরে পানিশূন্যতা বা মিনারেলস (minerals)-এর অভাব দেখা দিলে।
- কিছু ওষুধের প্রতিক্রিয়ায়, যেমন- ডাই-ইউরেটিক্স (diuretics), বিটা ব্লকারস (beta blockers), অ্যালকোহল (alcohol)।
- হার্ট (heart)-এর বা স্কিন (skin)-এর অসুখ থাকলে।
লক্ষণ বা উপসর্গঃ-
👌হিট স্ট্রোক-এ প্রাথমিক কিছু লক্ষণ বা উপসর্গ থাকে। গরমে হিট স্ট্রোক ঘটার দ্রুত সময়ের মধ্যে এটি ধরতে পারা গেলে অনেক জটিল অবস্থা থেকে রোগীকে বাঁচানো সম্ভব। সাধারনত নিচের লক্ষণগুলো হিট স্ট্রোক-এ দেখা যায়ঃ-
- শরীরের অত্যধিক তাপমাত্রা
- মাথাব্যথা
- দুর্বলতা
- ঝিঁমুনি
- বমি বমি ভাব
তবে রোগীর অবস্থা ক্রমশ খারাপের দিকে গেলে আরো কিছু উপসর্গ দেখা দেয়।
যেমন-
- চামড়ার রং লালচে হয়ে যাওয়া
- মানসিক ভারসাম্যহীনতা
- হাঁটতে অসুবিধা দেখা দেয়া
- চোখের মণি বড় হওয়া
- বমি
- অসংলগ্ন কথাবার্তা বা আচরণ
- ঘন ঘন শ্বাস নেয়া
- হৃদপিণ্ডের দ্রুত গতি
- খিঁচুনি
- অজ্ঞান হয়ে যাওয়া ।
আরো পড়ুনঃ চুল পড়া বন্ধের ঘরোয়া উপায়।
প্রাথমিক চিকিৎসাঃ-
💃যেহেতু এটি একটি জরুরি অবস্থা, তাই এর চিকিৎসাও দ্রুত হওয়া প্রয়োজন। জরুরি পরিস্থিতে চিকিৎসকগণ দ্রুতই ব্যবস্থা করেন।এই রকম পরিস্থিতিতে প্রথমেই যা করা দরকার তা হলো রোগীর শরীর ঠাণ্ডা করা এবং খোলা বা ফাঁকা স্থানে নিয়ে যাওয়া। এর তীব্রতা বা ধরনের উপর নির্ভর করে রোগীর সুস্থ হতে কয়েকদিন পর্যন্ত লেগে যেতে পারে।
💉যদি সঠিক চিকিৎসা করা না হয় তাহলে হিট স্ট্রোক রোগীর মস্তিষ্ক (brain), পেশী (muscles), কিডনি (kidney) এবং অন্যান্য অঙ্গগুলোকেও দীর্ঘমেয়াদী মারাত্মক ক্ষতির মুখে ফেলতে পারে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে শুধুমাত্র শরীরের যদি তাপমাত্রা কমানোর জন্য কিছু না করে বরং পানি বা লিকুইড (liquid) জাতীয় খাবার গ্রহনের উপর জোর দিতে বলেন।
আরো পড়ুনঃ স্তন ক্যান্সার কি?
প্রতিকারঃ-
১) লিকুইড খাবার
🍲আমাদের মধ্যে যারা বাইরে রোদে কাজ করি বা এক ঘন্টার বেশি ব্যায়াম (exercise) করি তাদের হিট স্ট্রোক এড়ানোর জন্য প্রচুর পরিমানে লিকুইড জাতীয় খাবার গ্রহন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে পানি সবচেয়ে ভাল পথ্য। এর সাথে কম মিষ্টি জাতীয় স্পোর্টস ড্রিঙ্কস (sports drinks) ও উপকারি।
২) ব্যায়াম ভোরবেলায় করুন
💃তাপদাহ বিদ্যমান থাকলে ব্যায়াম বা এক্সারসাইজ বা অবশ্যই সূর্যোদয়ের আগে বা খুব ভোরে করতে হবে। এটাও পানিশূন্যতা দেখা দেওয়ার অনেক বড় একটি কারণ।
৩) অ্যালকোহল গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন
🍹গরমের দিনগুলোতে অ্যালকোহল গ্রহন থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। কারণ, অ্যালকোহল বা সুগার ড্রিঙ্কস-গুলো শরীরে ডিহাইড্রেশন (dehydration) বা পানিশূন্যতার সৃষ্টি করে।
📢অনেক সময় শরীরে লবণ বা মিনারেলস-এর ঘাটতি দেখা যায়। সেই সময়ের জন্য সবচেয়ে উপকারি হলো ওরস্যালাইন (orsaline)। রোগীর পরিস্থিতি খারাপ হলে মুখে খাওয়া সম্ভব না হলে শিরার মাধ্যমে দেয়া হয়। কিন্তু হাইপারটেনশন (hypertension) বা উচ্চ রক্তচাপ (high blood pressure) রোগীদের ক্ষেত্রে সবসময় এটা নিরাপদ নাও হতে পারে। কারণ, স্যালাইনের সোডিয়াম রক্তচাপ বাড়াতে সাহায্য করে।
শিশু ও বয়স্কদের জন্য টিপসঃ-
👪সব বয়সী মানুষের ক্ষেত্রে হিট স্ট্রোক এক রকম হলেও, বয়স্ক ও শিশুদের প্রতি আলাদা নজর রাখা জরুরি। খেয়াল রাখতে হবে যেন তাদের শরীরে কোনভাবেই পানিশূন্যতা দেখা না দেয়। যেহেতু ১-২ বছর বয়সী শিশুরা নিজেদের শারীরিক অসুবিধাগুলোর কথা বলতে পারে না। তাই গরমের দিনে তাদের বার বার পানি বা শরবত দিতে হবে। শরীরের তাপমাত্রা খুব বেশি বাড়তে দেয়া যাবে না। তাদের খোলামেলা স্থানে বা প্রচুর পরিমাণে বাতাস আছে এই রকম স্থানে রাখতে হবে।
👭শিশুদের মতো বয়স্কদের জন্যও খোলামেলা স্থান বাছাই করা উচিত। যাদের ডায়াবেটিস (diabetes)– এর সমস্যা রয়েছে তাদের শরবত বা মিষ্টি জুস না দিয়ে পানি, ডাবের পানি এগুলো দিতে হবে।
💁হিট স্ট্রোক-এর শিকার এই গরমে আমি বা আপনি যে কোন সময়ে হতে পারি। তৎক্ষণাৎ প্রতিরোধের বা মোকাবেলার উপায়গুলো জানা থাকলে আমরা খুব সহজেই এই পরিস্থিতি থেকে নিজেদের বাঁচাতে পারি। সবাই সুস্থ থাকুন, এই কামনা রইলো।
আশা করি আমাদের প্রত্যেকটি পোষ্ট আপনাদের ভালোলাগবে এবং উপকারে আসবে ।
স্তন্য ক্যান্সার কি? কাদের হয়,লক্ষণ,কারণ এবং প্রতিকার।
মাইগ্রেন/Migraine কি? কারন,লক্ষণ/উপসর্গ এবং চিকিৎসা।
ডেঙ্গুজ্বর কী ? প্রকার,লক্ষণ, এবংচিকিৎসা।
ম্যালেরিয়া কী ? প্রকারভেদ,লক্ষণ, এবং চিকিৎসা।
সাইনোসাইটিস কী?লক্ষণ,করণীয় এবং চিকিৎসা।
নিউমোনিয়া কী?লক্ষণ এবং চিকিৎসা।
চিকনগুনিয়া কি?লক্ষণ,কিভাবে ছড়ায়,প্রতিরোধিএবং চিকিৎসা।
শীর্ষ ১০ ধরনের ক্যানসারের আক্রমন হয় বাংলাদেশে।
হুপিং কাশি/ Pertussis কী,লক্ষণ,জটিলতা, এবং চিকিৎসা।
মাম্প্স কী,লক্ষণ / উপসর্গ,মাম্প্স হলে কী কী করণীয়/ ( হোম রেমেডি) এবং চিকিৎসা।
Tonsillitis/টনসিলাইটিস কি? কারণ, লক্ষণ,কী খাওয়া যাবে/যাবে না এবং চিকিৎসা।
করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) টিকার চতুর্থ ডোজ এবং করোনা মহামারির আতঙ্ক কমে গেলেও সংক্রমণ থেমে নেই।
স্বাস্থ্য ভালো রাখতে খাওয়ার পর যে কাজগুলো করবেন না ?
দুধ -আনারস একসাথে খেলে কি মানুষ মারা যায় ? জেনেনিন এর সঠিক উত্তর ।
পিরিয়ড চলাকালিন মেয়েরা যেসব কাজ থেকে বিরত থাকবেন ।
পর্যাপ্ত ঘুম না হলে ক্ষতি কী । এবং জেনে নিন ঘুম না হলে কী করবেন ?
রাতকানা রোগ কী ? রাতকানা রোগ কেন হয় ? এবং এর প্রতিকার ।
রক্তস্বল্পতা কি ? এর কারণ , লক্ষণ, চিহ্ন, চিকিৎসা এবং উপদেশ ?
কান পাকা রোগ কেন হয় এর কারণ,লক্ষণ,চিহ্ন এবং চিকিৎসা
কনজাংটিভাইটিস বা ( চোখ উঠা ) কি ? এর কারণ , লক্ষণ/চিহ্ন , চিকিৎসা এবং প্রতিরোধ ।
NOTE: সকল ঔষধ রেজিষ্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করুন ।