ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের তথা পূর্ব বাংলার প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় বা প্যাচের অক্সর্ফোড এর ইতি কথন।

  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

Any Help24


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের তথা পূর্ব বাংলার প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯২১ সালের ১লা জুলাই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। পূর্ববঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান হল একটি মুসলমান মধ্যবিত্ত সমাজ সৃষ্টি করা। এই মুসলিম মধ্যবিত্ত সমাজই পরবর্তীতে পূর্ব বঙ্গের সমাজ ব্যবস্থা পরিবর্তনে নেতৃত্ব দান করে। বঙ্গভঙ্গের সময় থেকে পূর্ব বঙ্গে মুসলিম সমাজে যে নবজাগরণ শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তারই ফল।


প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট



১৯০৫ সালের অক্টোবর ১৬ বঙ্গভঙ্গে ঢাকাকে রাজধানী করে নতুন ‘পূর্ব বাংলা’ ও ‘আসাম’ প্রদেশ সৃষ্টি করা হয়। বঙ্গভঙ্গের ফলে পূর্ব বাংলায় শিক্ষার সবচেয়ে উন্নতি ঘটে। কিন্তু ১৯১১ সালের ১ নভেম্বর দিল্লির দরবারে ঘোষণার মাধ্যমে ১২ ডিসেম্বর বঙ্গভঙ্গ রদ করা হয়। বঙ্গভঙ্গের ফলে পূর্ব বঙ্গে শিক্ষার যে জোয়ার এসেছিল, তাতে অচিরেই ঢাকাতে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা অবধারিত ছিল। বঙ্গভঙ্গ রদের ফলে সে সম্ভবনা শেষ হয়ে যায়। ১৯১২ সালের ২১ জানুয়ারি ভারতের ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ ঢাকা সফরে আসেন এবং ঘোষণা করেন যে, তিনি সরকারের কাছে ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সুপারিশ করবেন। 

১৯১২ সনের মে মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ব্যারিস্টার রবার্ট নাথানের নেতৃত্বে নাথান কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটির ২৫ টি সাবকমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে ভারত সরকার প্রস্তাবিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য রুপরেখা স্থির করে। ভারত সচিব ১৯১৩ সালে নাথান কমিটির রিপোর্ট অনুমোদন দেন। কিন্তু, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা পথে প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়। ১৯১৭ সালের মার্চ মাসে ইমপেরিয়াল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীর নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী সরকারের কাছে অবিলম্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিল পেশের আহ্ববান জানান। ১৯১৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর লর্ড চেমস্ফোর্ড কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যাসমূহ তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করেন। 

সেই কমিশনের উপরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে পরামর্শ দেবার দায়িত্ব প্রদান করা হয়। এই কমিশনের প্রধান ছিলেন মাইকেল স্যাডলার। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন (স্যাডলার কমিশন) ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করে। কিন্তু, এ কমিশন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে সরকারি বা স্টেট বিশ্ববিদ্যালয় করার নাথান কমিটির প্রস্তাব সমর্থন করেনি। কিন্তু, ঢাকা কলেজের আইন বিভাগের সহঅধ্যক্ষ ড. নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত পূর্ণ স্বায়ত্বশাসনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল শক্তিরূপে অভিহিত করেন। একই কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনীতির অধ্যাপক টি সি উইলিয়ামস অর্থনৈতিক বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ন স্বাধীনতা দাবি করেন। 

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন ঢাকা শহরের কলেজ গুলোর পরিবর্তে বিভিন্ন আবাসিক হলকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিটরুপে গন্য করার সুপারিশ করে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কাউন্সিল হাউসের পাঁচ মাইল ব্যাসার্ধ এলাকাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অওতাভুক্ত এলাকায় গন্য করার কথাও বলা হয়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয প্রতিষ্টার ব্যাপারে তেরটি সুপারিশ করেছিল, এবং কিছু রদবদল সহ তা ১৯২০ সালের ভারতীয় আইন সভায় গৃহীত হয়। ভারতের তদানীন্তন গভর্ণর জেনারেল ১৯২০ সালের ২৩ মার্চ তাতে সম্মতি প্রদান করেন। স্যাডলার কমিশনের অন্যতম সদস্য ছিলেন লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক রেজিস্টার পি. জে. হার্টগ। তিনি ১৯২০ সালের ১ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। ১৯২১ সালের ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আনুষ্ঠানিক ভাবের কার্যক্রম শুরু করে।



ক্যাম্পাস

Any Help24



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে শুরু থেকেই সুপরিকল্পিত ভাবে একটি আবাসিক বিম্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলা হয়। অধুনালিপ্ত পূর্ববাংলা ও আসাম প্রদেশের রাজধানীর জন্য ঐতিহাসিক বাগ-এ-পাতশাহীতে গড়ে উঠেছিলো রমনীয় রমনা। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মনোলোভা দৃশ্যাবলী একদিকে যেমন ছিলো প্রগতিশীলতার ধারক, তেমনি তারুণ্যের উন্মত্ততাকে যেনো হাতছানি দিয়েছিলো এক উদাত্ত আহবানে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে কেন্দ্র করে তার পূর্ব পাশে অবস্থিত ঢাকা হল (বর্তমান শহীদুল্লাহ হল), লিটন হল, কার্জন হল, বিজ্ঞান ভবন সমূহ, ঢাকা হল এর পূর্ব পাশে বিরাট দীঘি, অপর পাশে ফজলুল হক মুসলিম হল। বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে প্রধান প্রবেশ পথ ছিলো ঢাকা হল (বর্তমান শহীদুল্লাহ হল)- এর দিক থেকে, মাঠে ঢুকতেই ডানে জিমনেসিয়াম আর বামে একটি পুকুর; বিশ্ববিদ্যালয় মাঠটি ত্রিকোণাকৃতি এবং তাতে দুটি ফুটবল গ্রাউন্ড ছিলো।

 মাঠের উত্তর দক্ষিণ পূর্ব তিনদিক দিয়েই বৃক্ষশোভিত রাজপথ প্রসারিত; বিশ্ববিদ্যালয় মাঠের দক্ষিণদিকের রাস্তাটির ইউকেলিপটাস শোভিত। যে রাস্তাটি মুসলিম হলের পর্যন্ত সম্প্রসারিত ও মুসলিম হলের সামনে শিরিষ অথবা রেইনট্রি জাতীয় গাছে শোভিত। পুরনো রেললাইনের সাথে সমান্তরালে আগের পূর্ব বাংলা এবং আসাম সরকারের সেক্রেটারিয়েট ভবন, সামনে ইউকেলিপটাস শোভিত প্রশস্ত রাজপথ এবং বিশ্ববিদ্যালয় ময়দান। ঐ সেক্রেটারিয়েট ভবনের দোতলায় প্রথমে মুসলিম হল এবং একতলায় বিজ্ঞান ছাড়া অন্যান্য বিভাগ বিশেষত কলা অনুষদের বিভাগ এবং ক্লাশরুম প্রতিষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় এ বিশাল ভবনটির পূর্বাংশ ব্যাতীত সবটুকুই সামরিক হাসপাতালে এবং দেশবিভাগের পূর্বে মেডিকেল কলেজে রূপান্তরিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠের উত্তর দিকে প্রবাহিত রাজপথের পাশে ছিলো দুটি কি তিনটি বিরাট লাল ইটের দোতলা বাংলো, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকেরাই বাস করতেন। এ বাংলোগুলোর পেছনে রমনা রেসকোর্সের দিকে মুখ করে বর্ধমান হাউস ও তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষক নিবাস।

 দেশবিভাগের পরে যা হয়েছিলো, পূর্ব বাংলার প্রধানমন্ত্রী প্রথমে খাজা নাজিমউদ্দিন এবং পরে নূরুল আমীনের বাসভবন। ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের জয়লাভের পর ১৯৫৭ সালে একুশ দফার এক দফা অনুযায়ী বর্ধমান হাউস বাংলা একডেমীতে রূপান্তরিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয় মাঠের ভেতরে সে কালে একটি পুকুর (উত্তর পূর্বকোণে) ছাড়াও একটি জঙ্গলাকীর্ণ পুরাতন কবরস্থান ছিলো, যা এখন নেই।



আবাসিক পরিবেশ

Any Help24


১৯২১ সালে ১ এ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ স্থাপিত হয়েছিল ঢাকা হল পরে শহীদুল্লাহ হল, জগন্নাথ হল ও মুসলিম হল পরে সলিমুল্লাহ মুসলিম হল নিয়ে। হলগুলো শুধু ছাত্রাবাস রুপেই নয় সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রদের শিক্ষা, সমাজ ও সাংস্কৃতিক জীবনে উপযুক্তভাবে গড়ে তোলার জন্য শিক্ষা ও অনুশীলন কেন্দ্ররূপেও পরিকল্পিত হয়েছিল। পরিকল্পনায় ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক শিক্ষক কোন না কোন হলের সঙ্গে যুক্ত থাকবেন, ছাত্রদের উপদেষ্টারুপে এবং অনুশীলনী ক্লাস নিবেন। প্রত্যেকটি হলকে চারটি হাউসে বিভক্ত করা হয়েছিল চারশত ছাত্রের জন্য আর প্রতি পঁচাত্তরজন ছাত্রের তত্ত্ববধানের জন্য একজন করে আবাসিক শিক্ষক বা হাউস টিউটরের ব্যবস্থা ছিল। হিন্দু ছাত্রদের জন্য জগন্নাথ হল  ও মুসলমান ছাত্র দের জন্য সলিমুল্লাহ মুসলিম হল স্থপিত করা হয়েছে। আর সবধর্মের ছাত্রদের জন্য ঢাকা হল স্থাপিত হয়েছে।

ঢাকা হলে  সর্ব  প্রথম প্রভোস্ট হলেন । ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ এফ. সি. সি. টার্নার। শুরুতে একমাত্র ঢাকা হলেরই নিজস্ব ভবনে ছিল কার্জন হল মিলনায়তনটি তার অধিকারভুক্ত ছিল সে কারণে একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের শিক্ষা বহির্ভূত সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে ঢাকা হল ছাত্র সংসদের ভূমিকা ছিল অগ্রগন্য। দেশ বিভাগের পর ঢাকা হলই ছিল প্রগতিশীল বামপন্থী ছাত্র আন্দোলনের সূতিকাগার, ১৯৬৯ সালের গণআন্দোলন মহান গণঅভ্যুত্থানে পরিনত হয়েছিল ঢাকা হলের প্রগতিশীল ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামানের শাহাদাতের বিনিময়ে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু মুসলিম ছাত্রদের জন্য স্থাপিত প্রথম হল “সলিমুল্লাহ মুসলিম হল” এ হলের প্রথম প্রোভস্ট নিযুক্ত হন ইতিহাস বিভাগের রিডার স্যার এ এফ রাহমান। ১৯২৯ সালের ২২ আগস্ট বাংলার গভর্ণর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর স্যার স্ট্যানলি জ্যাকসন ঢাকার প্রয়াত নবাব বাহাদুর স্যার সলিমুল্লাহ্র নামানুসারে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের’ এর ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করেন। ১৯৩১-৩২ শিক্ষাবর্ষে এর ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হয়।

জগন্নাথ হলের নামকরণ হয় ঢাকার বলিয়াদির জমিদার কিশোরীলাল রায় চৌধুরীর দানে তার পিতা জগন্নাথ রায় চৌধুরীর নামে। জগন্নাথ রায় চৌধুরীর নামেই ঢাকার জগন্নাথ কলেজের নামকরণ করা হয়েছিল। জগন্নাথ হলের প্রথম প্রভোস্ট ছিলের আইন বিভাগের প্রথম অধ্যাপক নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত। অধ্যাপক নরেশচন্দ্র সেনগুপ্তের উৎসাহে জগন্নাথ হলের প্রথম বার্ষিক সাহিত্যপত্র ‘বাসন্তিকা’ ১৯২৩ সালের প্রথম প্রকাশিত হয়। নরেশচন্দ্র সেনগুপ্তের পর প্রভোস্ট হন ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার।

প্রতিষ্ঠালগ্নে ঢাকা সমাজের রক্ষণশীলতার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্রী ভর্তির ব্যাপারে খুব দ্বিধান্বিত ছিলেন। কিন্তু কলকাতা বেথুন কলেজের গ্রাজুয়েট লীলা নাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ব্যাপারে ছিলেন নাছোড়বান্দা। ১৯২১ সালে লীলা নাগ ইংরেজিতে এমএ ক্লাসে ভর্তি হন এবং ১৯২৩ সালের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম এমএ ডিগ্রিধারী হিসেবে বের হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ছাত্রী সুষমা সেনগুপ্তা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মুসলিম ছাত্রী ছিলেন গণিত বিভাগের ফজিলতুন্নেসা। ধীরে ধীরে ছাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকলে ছাত্রী হোস্টেলের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এই উদ্দেশে ১৯২৬ সালের ২৮ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭ নং বাংলো ‘চামেরি হাউস’-এ (বর্তমানে সিরডাপ ভবন) প্রথম উইমেনস হাউস প্রতিষ্ঠা করা হয়। উইমেনস হাউস মাত্র তিন জন ছাত্রী নিয়ে যাত্রা শুরু করে। মিসেস পি. নাগ এই হাউসের হাউস টিউটর নিযুক্ত হন। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত উইমেনস হাউস চামেরি হাউসে ছিল পরে ১৯২৮ সালে তা ১০ নং বাংলোতে (বর্তমানে এস্থানে বিজ্ঞান গ্রন্থাগার অবস্থিত) স্থানান্তরিত হয়। ঐ সময় চামেরি বাংলোটিকে মুসলিম হলের এক্সটেনশন করা হয়। পরবর্তীকালে যে কোন বাংলোতেই হোক না কেন তাকে “চামেরি হাউস” বলে ডাকা হত। ১৯৩৮ সালে মেয়েদের হোস্টেল পুনরায় চামেরি হাউসে নিয়ে যাওয়া হয়।

১৯৪০ সালের


 ১এ জুলাই অবিভক্ত বাংলার  তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এ. কে. ফজলুক হকের নামানুসারে “ফজলুল হক মুসলিম হল” প্রতিষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ভবনের (বর্তমান ঢাকা মেডিকেল কলেজ) যে অংশে সলিমুল্লাহ হলের বর্ধিতাংশ ছিল সেখানে ফজলুল হক হল যাত্রা শুরু করে। ১৯৪২ সালে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ভবনে সামরিক হাসপাতাল স্থাপিত হলে ১৯৪৩ সালে ফজলুল হক হল বর্তমান অবস্থানে স্থানান্তরিত হয়, পূর্বে যা ছিল ঢাকা ইন্টারমেডিয়েট কলেজ হোস্টেল। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ফজলুল হক তিনি  হলেন  প্রথম প্রভোস্ট এবং প্রথম দুজন হাউস  টিউটর  হলেন ককাজী মোতাহার হোসেন ও আব্দুস সামাদ।


ইতিহাসের সাক্ষ্য


২০ দশক



১৯২৬ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঢাকা আসেছিল  ও  কার্জন হলে ১০ই  ফেব্রুয়ারীতে দ্যা মিনিং অফ আর্ট এবং ১৩ই ফেব্রুয়ারীতে দ্যা  বিগ এ্যান্ড দি কমপ্লেক্স বিষয়ে বক্তৃতা  করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে   প্রথম তিনটি হল থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে শুভেচ্ছা  জানানোর আয়োজন করেছেন। কিন্তু অসুস্থতার কারণে রবীন্দ্রনাথ কেবন মুসলিম হলের সংবর্ধণা সভায় যোগদান করতে পেরেছিলেন।

১৯২৫ সালের ১৯ জ়ানুয়ারি মুসলিম সাহিত্য সমাজ গঠিত হয়। এ প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠা ছিলেন অধ্যাপক আবুল হোসেন, তার সঙ্গে ছিলেন আবদুল কাদির, কাজী আবদুল ওদুদ, কাজী আনোয়ারুল কাদির, শামসুল হুদা, কাজী মোতাহার হোসেন, আবুল ফজল প্রমুখ শিক্ষক ও ছাত্র। এ প্রতিষ্ঠানের মূল মন্ত্র ছিল '"বুদ্ধির মুক্তি”। মুসলিম সাহিত্য সমাজের মুখপাত্র ছিল শিখা নামক বার্ষিকী। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম সাহিত্য সমাজের প্রথম বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধন করেন ১৯২৭ সালে। ১৯৩৬ সালে কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় মুসলিম সাহিত্য সমাজের দশম ও শেষ অধিবেশনের সভাপতি ছিলেন।

৩০ দশক


১৯৩৫ ; ৩৬ সালের শ্রীমতী করুণাকণা গুপ্তা ইতিহাস বিভাগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মহিলা শিক্ষিকা হিসেবে নিযুক্ত হলেন (প্রতিষ্ঠার ১৪ বছর পর)।

১৯৩৭ সালের  সর্ব  প্রথম ছাত্রী সংসদ গঠিত হয়েছে ও শ্রীমতী চারুপমা বসু তিনি সভাপতি;  সরমা দত্ত মজুমদার এবং অনুভা সেন তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক এবং সাহিত্য সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে ওঠেন। এই  ছাত্রী সংসদে ,সূপর্ণা, নামে ম্যাগাজিন প্রকাশ করে।

30 দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি বছরই সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হন। এই দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন যথাক্রমে ডাব্লুউ. এ. জেনকিন্স্, জর্জ হ্যারি ল্যাংলি, এ. এফ. রাহমান ও রমেশচন্দ্র মজুমদার। এই দশকে প্রায় প্রতি বছরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৯৩৬ সালের সমাবর্তনে স্যার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, স্যার আবদুর রহিম, স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু, স্যার প্রফুল্লচন্দ্র রায়, স্যার যদুনাথ সরকার, স্যার মোহাম্মদ ইকবাল এবং শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি দেওয়া হয়। ১৯৩৮ সালে ‘সংস্কৃত ও বাংলা বিভাগ’ ভেঙ্গে দুইটি আলাদা ‘সংস্কৃত’ ও ‘বাংলা’ বিভাগ খোলা হয়। ১৯৪০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১,৫৬৯ আর ছাত্রী সংখ্যা ৯৬।


৪০ দশক


১৯৪০ এর মার্চে লাহোর প্রস্তাব উত্থাপনের পর মুসলমান সমাজের ছাত্রদের মধ্যে পাকিস্তান আন্দোলন সাড়া জাগায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুসলমান ছাত্রগণ এই প্রথম দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক আন্দোলনের সাথে সক্রিয় ভাবে যুক্ত হয়। দেশ বিভাগের আগে ঢাকা শহর হিন্দুস্তান, পাকিস্তান এলাকায় বিভক্ত হয়ে উঠে। ঢাকার হিন্দুরা কংগ্রেস, ফরওয়ার্ড ব্লক, আরএসপি, হিন্দু মহাসভার অনুগামী ছিল, কিছু কিছু হিন্দু ছিল বামপন্থী। মুসলমান অধিবাসীদের কিছু ছিল মুসলিম লীগ সমর্থক আর বাকিরা শেরেবাংলা এ. কে. ফজলুক হকের অনুসারী।

দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় ক্যাম্পাসের অধিকাংশ ভবন সেনাবাহিনীর হুকুম দখলে চলে যায়। ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংকুচিত হয়ে পড়ে ঢাকা হল (বর্তমান শহীদুল্লাহ হল), ফজলুল হক হল এবং কার্জন হল এলাকার ভবনগুলোতে।

তেতাল্লিশের মন্বন্তরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংখ্যা সর্বনিন্ম পর্যায়ে নেমে আসে। দুর্ভিক্ষ শেষ হয়, যুদ্ধ থামে কিন্তু সাম্প্রদায়িক শক্তির কালো থাবা ধীরে ধীরে ভয়ঙ্কর হতে থাকে। ১৯৪৬ থেকে ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে প্রগতি লেখক সংঘের কর্মকান্ড বিকশিত হয়। এ সংঘের সক্রিয় কর্মীদের মধ্যে ছিলেন মুনীর চৌধুরী, শামসুর রহমান খান, সুলতানুজ্জামান খান, অরবিন্দ সেন, মদনমোহন বসাক, কল্যান দাশগুপ্ত, আবদুল্লাহ আল-মুতী শরফুদ্দিন প্রমুখ।


ভারত বিভাগ ও চল্লিশের দশকের শেষ অংশ


আওয়ামী মুসলিম লীগ

Any Help24


১৯৪৩ সালের শেষ দিকে বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের কাউন্সিলে আবুল হাশিম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৪৪ সালে আবুল হাশিম ঢাকায় আসেন এবং ১৫০ নং মোগলটুলীতে ৯ এপ্রিল শামসুল হকেরনেতৃত্বে মুসলিম লীগ কর্মী-শিবির স্থাপিত হয়। এই কর্মী শিবির থেকেই পরবর্তীকালে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতিতে বিরোধী দলের সূচনা হয়েছিল, জন্ম হয়েছিল ‘ছাত্রলীগ’ ও ‘আওয়ামী মুসলিম লীগের’ এই কর্মী শিবিরের অধিকাংশ কর্মী ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। ১৯৪৬ নির্বাচনে মুসলিম লীগ শতকরা ৯৭ ভাগ আসন গ্রহণ করেছিল। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট নতুন রাষ্ট্র পাকিস্তানের জন্ম হয়। কিন্তু, ধীরে ধীরে মুসলিম লীগখাজা নাজিমুদ্দিন, নুরুল আমিন ও ইউসুফ আলী চৌধুরীর পকেট প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়। এর প্রতিবিধানের জন্য ১৯৪৮ সালের জানুয়ারিতে ১৫০ নং মোগলটুলিতে শামসুল হক, শেখ মুজিবুর রহমান, খন্দকার মোশতাক আহমেদ এক কর্মী সম্মেলন আহ্ববান করেন। মূলত, এই সম্মেলনেই আওয়ামী মুসলিম লীগের সূচনা হয়। সূচনা পর্বে যারা নেতৃত্ব দেন তাদের অধিকাংশই ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।


ভাষা আন্দোলন


পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পূর্বে আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা: জিয়াউদ্দিন উর্দুকে পাকিস্তান রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব করলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. শহীদুল্লাহ্ পাল্টা বাংলা ভাষার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। একই সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল কাসেমের নেতৃত্বে ‘তমুদ্দুন মজলিস’ পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষার দাবিতে প্রচারাভিযান শুরু করে। পাকিস্তানের গনপরিষদে বাংলা ভাষার স্থান না হওয়ায় ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সমাজ প্রতিবাদ সভা, সাধারণ ধর্মঘট ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। ঐ দিন পুলিশ ছাত্রদের বাধা দেয় এবং বহু ছাত্রকে গ্রেফতার করে। বন্দী নেতাদের মধ্যে ছিলেন শামসুল হক, শেখ মুজিবুর রহমান,অলি আহাদ, শওকত আলি, কাজী গোলাম মাহবুব প্রমুখ। এরপরও ছাত্র আন্দোলন চলতে থাকে। শেষ পর্যন্ত ১৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন ছাত্রদের সাথে একটি চুক্তি পত্র সাক্ষার করেন। এর চার দিন পর পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকা শহরে আসেন এবং ২১ মার্চ তারিখে ঢাকা ঘোড়দৌড় ময়দানে এক বিরাট জনসভায় বক্তৃতা করেন এবং উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার স্পষ্ট ঘোষণা দেন। মার্চ ২৪ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সমাবর্তন অনুষ্ঠানে জিন্নাহ ভাষণ দেন। এখানে তিনি বলেন,

রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রদেশের যোগাযোগের ভাষা হিসেবে একটি ভাষা থাকবে এবং সে ভাষা হবে উর্দু অন্য কোন ভাষা নয়। কাজেই স্বাভাবিকভাবে রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু, যা এই উপমহাদেশের লক্ষ লক্ষ মুসলমানের দ্বারা পুষ্ট হয়েছেন। পাকিস্তানের এক  প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের সকলকেই  বোঝেন এবং সব সময়  যার মধ্যে অন্য  কোনো প্রাদেশিক ভাষা থেকে অধিক ইসলামী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বাস্তব রুপ লাভ করেছেন  এবং সে ভাষা অন্যান্য ইসলামী  অনেক দেশগুলিতেও ব্যবহৃত ভাষার সর্বাপেক্ষা কাছাকাছি ।

মার্চ ২৪ তারিখে রাষ্ট্রভাষা কর্ম পরিষদের একটি প্রতিনিধিদল জিন্নাহ্র সাথে সাক্ষাৎ করেন ও বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানিয়ে একটি স্মারকলিপি পেশ করেন। এই প্রতিনিধিদলে ছিলেনশামসুল হক, কামরুদ্দিন আহমেদ, আবুল কাশেম, তাজউদ্দিন আহমেদ, মোহাম্মদ তোয়াহা, আজিজ আহমদ, অলি আহাদ, নঈমুদ্দিন আহমদ, শামসুল আলম এবং নজরুল ইসলাম। ১৯৪৮ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে এক সভায় পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম সরকার বিরোধী সংগঠন ‘পূর্ব পাকিস্তান মুসলীম ছাত্রলীগ’ গঠিত হয়।

১৯৪৮ এর ২৭ নভেম্বর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলি খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠে এক ছাত্র সভায় ভাষণ দেন। এই সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র ইউনিয়নের তরফ থেকে বাংলা ভাষার দাবি পুনরায় উত্থাপন করা হয়। কিন্তু লিয়াকত আলি খান কোন মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকেন।


বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন




Any Help24

১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন ঢাকায় নিখিল পাকিস্তান মুসলিম লীগের অধিবেশনে সভাপতির ভাষণে ঘোষণা করেন উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা তখন ঢাকায় ছাত্রসমাজ ফেটে পড়ে। প্রতিবাদস্বরুপ ৩০ জানুয়ারি ঢাকায় ছাত্র ধর্মঘট পালিত হয় এবং আতাউর রহমান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আওয়ামী মুসলিম লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, বিশ্ববিদ্যালয় সংগ্রাম পরিষদ, খিলাফতে রব্বানী পার্টির প্রতিনিধিদের নিয়ে ‘সর্বদলীয় কর্মপরিষদ’ গঠিত হয়। ৪ ষ্ঠা ফেব্রুয়ারি পুনরায় আবার ছাত্র ধর্মঘট পালিত হয় এবং স্থির হয় ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা দিবসরুপে পালিত হবে।

 ২০ ফেব্রুয়ারি সন্ধায় নুরুল আমিন সরকার ঢাকায় ১১৪ ধারা জারি করে। নবাবপুরে আওয়ামী লীগ অফিসে আবুল হাশিমের সভাপতিত্বে ১১৪ ধারা না ভাঙ্গার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু, বিশ্ববিদ্যালয় সংগ্রাম পরিষদ ১১৪ ধারা ভঙ্গ করতে বদ্ধপরিকর ছিল। সংগ্রাম পরিষদের সভায় আবদুল মতিন, অলি আহাদ ও গোলাম মওলা ১১৪ ধারা ভাঙ্গার পক্ষে ভোট দেন। ছাত্ররা ১০ জনে অসংখ্য দলে বিভক্ত হয়ে শৃঙ্খলার সঙ্গে ১১৪ ধারা ভঙ্গের সিদ্ধান্ত নেয়। 

২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররা ১১৪ ধারা ভাঙ্গা শুরু করলে ছাত্রদের সাথে পুলিশের খন্ডযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। ও দিকে বিকাল তিনটার দিকে আইন পরিষদে বাজেট অধিবেশন শুরু হবার কথাছিল। ছাত্ররা ভাষার দাবিতে পরিষদ ভবনের দিকে যেতে শুরু করে, কিন্তু পুলিশ বাধা দেয় ও একপর্যায়ে গুলি বর্ষন শুরু করে। প্রথম দফা গুলিতে রফিকউদ্দিন ও জব্বার নিহত হয়। দ্বিতীয় দফা গুলিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবুল বরকত আহত হয়   এবংরাতে নিহত হন। 

২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ প্রাঙ্গনে গায়েবি জানাজা অনুষ্ঠিত হয় এবং ছাত্ররা এক বিরাট শোক শোভাযাত্রা বের করে। হাইকোর্ট ও কার্জন হলের মাঝামাঝি রাস্তায় পুলিশ ছাত্রদের বাধা দেয় এবং গুলি চালায়। এ সময় শফিউর রহমান ও রিকশাচালক আউয়াল নিহত হন। 

২৩ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররা একটি শহীদ মিনার নির্মান করে। ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে অনানুষ্ঠানিক ভাবে শহীদ শফিউর রহমানে পিতা আর ২৬ ফেব্রুয়ারি আবুল কালাম শামসুদ্দিন আনুষ্ঠানিক ভাবে শহীদ মিনারের উদ্বোধন করেছিলেন। ইতিমধ্যে পুলিশ নিরাপত্তা আইনে আবুল হাশিম, আবদুল হামিদ খান ভাসানী, অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, অধ্যাপক অজিতকুমার গুহ, পুলিন দে, অধ্যাপক পৃথ্বিশ চক্রবর্তী, অলি আহাদ প্রমুখকে গ্রেফতার করে। নুরুল আমিন সরকার ভাষা আন্দোলনকারীদের ‘ভারতের চর’, ‘হিন্দু’, ‘কমিউনিস্ট’ ইত্যাদি আখ্যা দেয়।

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা



১৯৬৭ সালে আইয়ুব সরকার পূর্ব পাকিস্তানের কয়েকজন সামরিক ও বেসামরিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে লেফেটেন্যান্ট কর্ণেল মোয়াজ্জেম হোসেনকে আসামী রুপে ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’ করে। কয়েকদিন পর শেখ মুজিবকে প্রধান আসামী করা হয়। এই মামলার  কারনে সমগ্র পূর্ব বাংলার মানুষ ফেটে পরে ও  এই আন্দোলনের প্রধান  নেতৃত্ব দেন  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ দফায়   গঠিত  সর্বদলীয় সংগ্রাম সংগ্রাম পরিষদ  ।



মুক্তিযুদ্ধ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

Any Help24

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এক গুরুত্বপূর্ণ দলিল। একাত্তরে পাকিস্তান সশস্ত্রবাহিনী বাঙালি সৈনিক, বৈমানিক ও ছাত্রছাত্রীগনকে একই পর্যায়ভুক্ত করে আক্রমণ চালিয়েছিল। এই অপারেশনের নাম ছিল “অপারেশন সার্চ লাইট” এইচ আওয়ার নির্ধারিত হয়েছিল ২৬ মার্চ রাত ১ টা। ক্যান্টনমেন্ট থেকে সেনাবাহিনী প্রথম প্রতিরোধের সম্মুখীন হয় ফার্মগেটে। রাস্তায় পড়ে থাকা একটি বিশাল গাছ বাহিনীর গতিরোধ করে, রাস্তার পাশের এলাকা পুরানো গাড়ি আর স্টিম রোলার দিয়ে বন্ধ ছিল। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুসলিম হলের ছাত্ররা হলের সামনে একটি বড় গাছের গুড়ি ফেলে রেখে সেনাবাহিনীকে বাধাঁ দেয়। সকাল ৪টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ভবন গুলো দখল করে নেয় তারা। ১৮ নং পাঞ্জাব এর পর ২২ নং বেলুচ  তারপর ৩২ নং পাঞ্জাব রেজিমেন্টের বিভিন্ন ব্যাটেলিয়ন নিয়ে গঠিত বিশেষ মোবাইল বাহিনী লেফটেনেন্ট কর্ণেল তাজের নেতৃত্বে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল, ট্যাংক বিধ্বংসী বিকয়েললেস রাইফেল, রকেট লাঞ্চার, মর্টার, ভারি ও হাল্কা মেশিনগানে সজ্জিত হয়ে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে ২৭ মার্চ সকাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ঘেরাও করে আক্রমন, পাইকারি হত্যা, লুন্ঠন, অগ্নিসংযোগ এবং ধ্বংস যজ্ঞ চালায়। ঐ রাতে দৈবক্রমে পাকিস্তানী আক্রমণ থেকে বেঁচে যাওয়া একজন অধ্যাপক ড. মফিজুল্লাহ্ কবির  তিনি তার ১৯৭১-৭২ সালের বার্ষিক রিপোর্টে লেখেন, ঐ রাতে ছাত্র সহ প্রায় ৩০০ ব্যক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নিহত হয়।

 সেই সাথে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ জন শিক্ষক ও ২৬ জন অন্যান্য কর্মচারী। নিহত শিক্ষকদের মধ্যে ছিলেন, 
  • ড. ফজলুর রহমান মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগ,  
  • অধ্যাপক এ. আর. খান খাদিম গণিত বিভাগ, 
  • অধ্যাপক শরাফত আলী, 
  • ড. গোবিন্দচন্দ্র দেব প্রাক্তন প্রোভস্ট জগন্নাথ হল, 
  • অধ্যাপক মনিরুজ্জামান,
  •  ড. জ্যোতির্ময় গুহঠাকুর প্রোভস্ট জগন্নাথ হলের, 
  • অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য, 
  • অধ্যাপক মুহম্মদ মুকতাদির ভূতত্ত্ব প্রমুখ। 

সবচেয়ে নারকীয় ঘটনা ঘটে জগন্নাথ হলে, সেই রাতে ৩৪ জন ছাত্র শুধু সেই হলেই নিহত হয়। ২৬ মার্চ রমনা কালীবাড়িও আক্রান্ত হয়। সেস্থলে নিহত হয় জগন্নাথ হলের ৫/৬ জন ছাত্র।  তাছাড়ও  হানাদার বাহিনী হত্যা করে মধুর ক্যান্টিন খ্যাত মধুসূদন দে’কেও (মধুদা) মুক্তিযুদ্ধ কালীন পাকিস্তানী সৈন্যরা মুধুর ক্যান্টিন ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দিতে শুরু করলে উর্দু বিভাগের শিক্ষক আফতাব আহমদ সিদ্দিকী খবর পেয়ে তাদের বাধাঁ দেন এবং জানান যে এই ভবনেই ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১০ নভেম্বর সশস্ত্র সৈন্যরা রোকেয়া হলে প্রবেশ করে এবং ত্রিশজন ছাত্রীর উপর বর্বর নির্যাতন করে, তারা প্রোভস্ট বাংলোও অবরোধ করে রাখে।

বাকী অংশ পরবর্তী ব্লগে...................


আশা করি আমাদের প্রত্যেকটি পোষ্ট আপনাদের ভালোলাগবে এবং উপকারে আসবে ।

গাজীপুর জেলা ইতিহাস এবং দর্শনীয় স্থান।

বিজ্ঞান থেকে আসা গুরুত্বপূর্ণ ৫০ টি প্রশ্ন/উত্তর

বাংলাদেশের সকল জাতীয় দিবস সমূহ

বাংলা ব্যাকরণ. ধ্বনিতত্ত্ব থেকে কিছু গুরত্বপূর্ণ প্রশ্ন/উত্তর

বাংলাদেশ স্বাস্থ্যসেবা সাধারন জ্ঞান

স্বামী স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ এক হলে কি কোনো সমস্যা হয় ?

স্বাস্থ্য ভালো রাখতে খাওয়ার পর যে কাজগুলো করবেন না ?

দুধ -আনারস একসাথে খেলে কি মানুষ মারা যায় ? জেনেনিন এর সঠিক উত্তর ।

পিরিয়ড চলাকালিন মেয়েরা যেসব কাজ থেকে বিরত থাকবেন ।

পর্যাপ্ত ঘুম না হলে ক্ষতি কী । এবং জেনে নিন ঘুম না হলে কী করবেন ?