ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের তথা পূর্ব বাংলার প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯২১ সালের ১লা জুলাই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। পূর্ববঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান হল একটি মুসলমান মধ্যবিত্ত সমাজ সৃষ্টি করা। এই মুসলিম মধ্যবিত্ত সমাজই পরবর্তীতে পূর্ব বঙ্গের সমাজ ব্যবস্থা পরিবর্তনে নেতৃত্ব দান করে। বঙ্গভঙ্গের সময় থেকে পূর্ব বঙ্গে মুসলিম সমাজে যে নবজাগরণ শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তারই ফল।
প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট
১৯০৫ সালের অক্টোবর ১৬ বঙ্গভঙ্গে ঢাকাকে রাজধানী করে নতুন ‘পূর্ব বাংলা’ ও ‘আসাম’ প্রদেশ সৃষ্টি করা হয়। বঙ্গভঙ্গের ফলে পূর্ব বাংলায় শিক্ষার সবচেয়ে উন্নতি ঘটে। কিন্তু ১৯১১ সালের ১ নভেম্বর দিল্লির দরবারে ঘোষণার মাধ্যমে ১২ ডিসেম্বর বঙ্গভঙ্গ রদ করা হয়। বঙ্গভঙ্গের ফলে পূর্ব বঙ্গে শিক্ষার যে জোয়ার এসেছিল, তাতে অচিরেই ঢাকাতে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা অবধারিত ছিল। বঙ্গভঙ্গ রদের ফলে সে সম্ভবনা শেষ হয়ে যায়। ১৯১২ সালের ২১ জানুয়ারি ভারতের ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ ঢাকা সফরে আসেন এবং ঘোষণা করেন যে, তিনি সরকারের কাছে ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সুপারিশ করবেন।
ক্যাম্পাস
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে শুরু থেকেই সুপরিকল্পিত ভাবে একটি আবাসিক বিম্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলা হয়। অধুনালিপ্ত পূর্ববাংলা ও আসাম প্রদেশের রাজধানীর জন্য ঐতিহাসিক বাগ-এ-পাতশাহীতে গড়ে উঠেছিলো রমনীয় রমনা। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মনোলোভা দৃশ্যাবলী একদিকে যেমন ছিলো প্রগতিশীলতার ধারক, তেমনি তারুণ্যের উন্মত্ততাকে যেনো হাতছানি দিয়েছিলো এক উদাত্ত আহবানে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে কেন্দ্র করে তার পূর্ব পাশে অবস্থিত ঢাকা হল (বর্তমান শহীদুল্লাহ হল), লিটন হল, কার্জন হল, বিজ্ঞান ভবন সমূহ, ঢাকা হল এর পূর্ব পাশে বিরাট দীঘি, অপর পাশে ফজলুল হক মুসলিম হল। বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে প্রধান প্রবেশ পথ ছিলো ঢাকা হল (বর্তমান শহীদুল্লাহ হল)- এর দিক থেকে, মাঠে ঢুকতেই ডানে জিমনেসিয়াম আর বামে একটি পুকুর; বিশ্ববিদ্যালয় মাঠটি ত্রিকোণাকৃতি এবং তাতে দুটি ফুটবল গ্রাউন্ড ছিলো।
আবাসিক পরিবেশ
১৯২১ সালে ১ এ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ স্থাপিত হয়েছিল ঢাকা হল পরে শহীদুল্লাহ হল, জগন্নাথ হল ও মুসলিম হল পরে সলিমুল্লাহ মুসলিম হল নিয়ে। হলগুলো শুধু ছাত্রাবাস রুপেই নয় সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রদের শিক্ষা, সমাজ ও সাংস্কৃতিক জীবনে উপযুক্তভাবে গড়ে তোলার জন্য শিক্ষা ও অনুশীলন কেন্দ্ররূপেও পরিকল্পিত হয়েছিল। পরিকল্পনায় ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক শিক্ষক কোন না কোন হলের সঙ্গে যুক্ত থাকবেন, ছাত্রদের উপদেষ্টারুপে এবং অনুশীলনী ক্লাস নিবেন। প্রত্যেকটি হলকে চারটি হাউসে বিভক্ত করা হয়েছিল চারশত ছাত্রের জন্য আর প্রতি পঁচাত্তরজন ছাত্রের তত্ত্ববধানের জন্য একজন করে আবাসিক শিক্ষক বা হাউস টিউটরের ব্যবস্থা ছিল। হিন্দু ছাত্রদের জন্য জগন্নাথ হল ও মুসলমান ছাত্র দের জন্য সলিমুল্লাহ মুসলিম হল স্থপিত করা হয়েছে। আর সবধর্মের ছাত্রদের জন্য ঢাকা হল স্থাপিত হয়েছে।
ঢাকা হলে সর্ব প্রথম প্রভোস্ট হলেন । ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ এফ. সি. সি. টার্নার। শুরুতে একমাত্র ঢাকা হলেরই নিজস্ব ভবনে ছিল কার্জন হল মিলনায়তনটি তার অধিকারভুক্ত ছিল সে কারণে একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের শিক্ষা বহির্ভূত সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে ঢাকা হল ছাত্র সংসদের ভূমিকা ছিল অগ্রগন্য। দেশ বিভাগের পর ঢাকা হলই ছিল প্রগতিশীল বামপন্থী ছাত্র আন্দোলনের সূতিকাগার, ১৯৬৯ সালের গণআন্দোলন মহান গণঅভ্যুত্থানে পরিনত হয়েছিল ঢাকা হলের প্রগতিশীল ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামানের শাহাদাতের বিনিময়ে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু মুসলিম ছাত্রদের জন্য স্থাপিত প্রথম হল “সলিমুল্লাহ মুসলিম হল” এ হলের প্রথম প্রোভস্ট নিযুক্ত হন ইতিহাস বিভাগের রিডার স্যার এ এফ রাহমান। ১৯২৯ সালের ২২ আগস্ট বাংলার গভর্ণর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর স্যার স্ট্যানলি জ্যাকসন ঢাকার প্রয়াত নবাব বাহাদুর স্যার সলিমুল্লাহ্র নামানুসারে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের’ এর ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করেন। ১৯৩১-৩২ শিক্ষাবর্ষে এর ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হয়।
জগন্নাথ হলের নামকরণ হয় ঢাকার বলিয়াদির জমিদার কিশোরীলাল রায় চৌধুরীর দানে তার পিতা জগন্নাথ রায় চৌধুরীর নামে। জগন্নাথ রায় চৌধুরীর নামেই ঢাকার জগন্নাথ কলেজের নামকরণ করা হয়েছিল। জগন্নাথ হলের প্রথম প্রভোস্ট ছিলের আইন বিভাগের প্রথম অধ্যাপক নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত। অধ্যাপক নরেশচন্দ্র সেনগুপ্তের উৎসাহে জগন্নাথ হলের প্রথম বার্ষিক সাহিত্যপত্র ‘বাসন্তিকা’ ১৯২৩ সালের প্রথম প্রকাশিত হয়। নরেশচন্দ্র সেনগুপ্তের পর প্রভোস্ট হন ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার।
প্রতিষ্ঠালগ্নে ঢাকা সমাজের রক্ষণশীলতার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্রী ভর্তির ব্যাপারে খুব দ্বিধান্বিত ছিলেন। কিন্তু কলকাতা বেথুন কলেজের গ্রাজুয়েট লীলা নাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ব্যাপারে ছিলেন নাছোড়বান্দা। ১৯২১ সালে লীলা নাগ ইংরেজিতে এমএ ক্লাসে ভর্তি হন এবং ১৯২৩ সালের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম এমএ ডিগ্রিধারী হিসেবে বের হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ছাত্রী সুষমা সেনগুপ্তা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মুসলিম ছাত্রী ছিলেন গণিত বিভাগের ফজিলতুন্নেসা। ধীরে ধীরে ছাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকলে ছাত্রী হোস্টেলের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এই উদ্দেশে ১৯২৬ সালের ২৮ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭ নং বাংলো ‘চামেরি হাউস’-এ (বর্তমানে সিরডাপ ভবন) প্রথম উইমেনস হাউস প্রতিষ্ঠা করা হয়। উইমেনস হাউস মাত্র তিন জন ছাত্রী নিয়ে যাত্রা শুরু করে। মিসেস পি. নাগ এই হাউসের হাউস টিউটর নিযুক্ত হন। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত উইমেনস হাউস চামেরি হাউসে ছিল পরে ১৯২৮ সালে তা ১০ নং বাংলোতে (বর্তমানে এস্থানে বিজ্ঞান গ্রন্থাগার অবস্থিত) স্থানান্তরিত হয়। ঐ সময় চামেরি বাংলোটিকে মুসলিম হলের এক্সটেনশন করা হয়। পরবর্তীকালে যে কোন বাংলোতেই হোক না কেন তাকে “চামেরি হাউস” বলে ডাকা হত। ১৯৩৮ সালে মেয়েদের হোস্টেল পুনরায় চামেরি হাউসে নিয়ে যাওয়া হয়।
১৯৪০ সালের
১এ জুলাই অবিভক্ত বাংলার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এ. কে. ফজলুক হকের নামানুসারে “ফজলুল হক মুসলিম হল” প্রতিষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ভবনের (বর্তমান ঢাকা মেডিকেল কলেজ) যে অংশে সলিমুল্লাহ হলের বর্ধিতাংশ ছিল সেখানে ফজলুল হক হল যাত্রা শুরু করে। ১৯৪২ সালে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ভবনে সামরিক হাসপাতাল স্থাপিত হলে ১৯৪৩ সালে ফজলুল হক হল বর্তমান অবস্থানে স্থানান্তরিত হয়, পূর্বে যা ছিল ঢাকা ইন্টারমেডিয়েট কলেজ হোস্টেল। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ফজলুল হক তিনি হলেন প্রথম প্রভোস্ট এবং প্রথম দুজন হাউস টিউটর হলেন ককাজী মোতাহার হোসেন ও আব্দুস সামাদ।
ইতিহাসের সাক্ষ্য
২০ দশক
১৯২৬ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঢাকা আসেছিল ও কার্জন হলে ১০ই ফেব্রুয়ারীতে দ্যা মিনিং অফ আর্ট এবং ১৩ই ফেব্রুয়ারীতে দ্যা বিগ এ্যান্ড দি কমপ্লেক্স বিষয়ে বক্তৃতা করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম তিনটি হল থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে শুভেচ্ছা জানানোর আয়োজন করেছেন। কিন্তু অসুস্থতার কারণে রবীন্দ্রনাথ কেবন মুসলিম হলের সংবর্ধণা সভায় যোগদান করতে পেরেছিলেন।
১৯২৫ সালের ১৯ জ়ানুয়ারি মুসলিম সাহিত্য সমাজ গঠিত হয়। এ প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠা ছিলেন অধ্যাপক আবুল হোসেন, তার সঙ্গে ছিলেন আবদুল কাদির, কাজী আবদুল ওদুদ, কাজী আনোয়ারুল কাদির, শামসুল হুদা, কাজী মোতাহার হোসেন, আবুল ফজল প্রমুখ শিক্ষক ও ছাত্র। এ প্রতিষ্ঠানের মূল মন্ত্র ছিল '"বুদ্ধির মুক্তি”। মুসলিম সাহিত্য সমাজের মুখপাত্র ছিল শিখা নামক বার্ষিকী। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম সাহিত্য সমাজের প্রথম বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধন করেন ১৯২৭ সালে। ১৯৩৬ সালে কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় মুসলিম সাহিত্য সমাজের দশম ও শেষ অধিবেশনের সভাপতি ছিলেন।
৩০ দশক
১৯৩৫ ; ৩৬ সালের শ্রীমতী করুণাকণা গুপ্তা ইতিহাস বিভাগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মহিলা শিক্ষিকা হিসেবে নিযুক্ত হলেন (প্রতিষ্ঠার ১৪ বছর পর)।
১৯৩৭ সালের সর্ব প্রথম ছাত্রী সংসদ গঠিত হয়েছে ও শ্রীমতী চারুপমা বসু তিনি সভাপতি; সরমা দত্ত মজুমদার এবং অনুভা সেন তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক এবং সাহিত্য সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে ওঠেন। এই ছাত্রী সংসদে ,সূপর্ণা, নামে ম্যাগাজিন প্রকাশ করে।
30 দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি বছরই সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হন। এই দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন যথাক্রমে ডাব্লুউ. এ. জেনকিন্স্, জর্জ হ্যারি ল্যাংলি, এ. এফ. রাহমান ও রমেশচন্দ্র মজুমদার। এই দশকে প্রায় প্রতি বছরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৯৩৬ সালের সমাবর্তনে স্যার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, স্যার আবদুর রহিম, স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু, স্যার প্রফুল্লচন্দ্র রায়, স্যার যদুনাথ সরকার, স্যার মোহাম্মদ ইকবাল এবং শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি দেওয়া হয়। ১৯৩৮ সালে ‘সংস্কৃত ও বাংলা বিভাগ’ ভেঙ্গে দুইটি আলাদা ‘সংস্কৃত’ ও ‘বাংলা’ বিভাগ খোলা হয়। ১৯৪০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১,৫৬৯ আর ছাত্রী সংখ্যা ৯৬।
৪০ দশক
১৯৪০ এর মার্চে লাহোর প্রস্তাব উত্থাপনের পর মুসলমান সমাজের ছাত্রদের মধ্যে পাকিস্তান আন্দোলন সাড়া জাগায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুসলমান ছাত্রগণ এই প্রথম দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক আন্দোলনের সাথে সক্রিয় ভাবে যুক্ত হয়। দেশ বিভাগের আগে ঢাকা শহর হিন্দুস্তান, পাকিস্তান এলাকায় বিভক্ত হয়ে উঠে। ঢাকার হিন্দুরা কংগ্রেস, ফরওয়ার্ড ব্লক, আরএসপি, হিন্দু মহাসভার অনুগামী ছিল, কিছু কিছু হিন্দু ছিল বামপন্থী। মুসলমান অধিবাসীদের কিছু ছিল মুসলিম লীগ সমর্থক আর বাকিরা শেরেবাংলা এ. কে. ফজলুক হকের অনুসারী।
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় ক্যাম্পাসের অধিকাংশ ভবন সেনাবাহিনীর হুকুম দখলে চলে যায়। ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংকুচিত হয়ে পড়ে ঢাকা হল (বর্তমান শহীদুল্লাহ হল), ফজলুল হক হল এবং কার্জন হল এলাকার ভবনগুলোতে।
তেতাল্লিশের মন্বন্তরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংখ্যা সর্বনিন্ম পর্যায়ে নেমে আসে। দুর্ভিক্ষ শেষ হয়, যুদ্ধ থামে কিন্তু সাম্প্রদায়িক শক্তির কালো থাবা ধীরে ধীরে ভয়ঙ্কর হতে থাকে। ১৯৪৬ থেকে ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে প্রগতি লেখক সংঘের কর্মকান্ড বিকশিত হয়। এ সংঘের সক্রিয় কর্মীদের মধ্যে ছিলেন মুনীর চৌধুরী, শামসুর রহমান খান, সুলতানুজ্জামান খান, অরবিন্দ সেন, মদনমোহন বসাক, কল্যান দাশগুপ্ত, আবদুল্লাহ আল-মুতী শরফুদ্দিন প্রমুখ।
ভারত বিভাগ ও চল্লিশের দশকের শেষ অংশ
আওয়ামী মুসলিম লীগ
১৯৪৩ সালের শেষ দিকে বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের কাউন্সিলে আবুল হাশিম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৪৪ সালে আবুল হাশিম ঢাকায় আসেন এবং ১৫০ নং মোগলটুলীতে ৯ এপ্রিল শামসুল হকেরনেতৃত্বে মুসলিম লীগ কর্মী-শিবির স্থাপিত হয়। এই কর্মী শিবির থেকেই পরবর্তীকালে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতিতে বিরোধী দলের সূচনা হয়েছিল, জন্ম হয়েছিল ‘ছাত্রলীগ’ ও ‘আওয়ামী মুসলিম লীগের’ এই কর্মী শিবিরের অধিকাংশ কর্মী ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। ১৯৪৬ নির্বাচনে মুসলিম লীগ শতকরা ৯৭ ভাগ আসন গ্রহণ করেছিল। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট নতুন রাষ্ট্র পাকিস্তানের জন্ম হয়। কিন্তু, ধীরে ধীরে মুসলিম লীগখাজা নাজিমুদ্দিন, নুরুল আমিন ও ইউসুফ আলী চৌধুরীর পকেট প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়। এর প্রতিবিধানের জন্য ১৯৪৮ সালের জানুয়ারিতে ১৫০ নং মোগলটুলিতে শামসুল হক, শেখ মুজিবুর রহমান, খন্দকার মোশতাক আহমেদ এক কর্মী সম্মেলন আহ্ববান করেন। মূলত, এই সম্মেলনেই আওয়ামী মুসলিম লীগের সূচনা হয়। সূচনা পর্বে যারা নেতৃত্ব দেন তাদের অধিকাংশই ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।
ভাষা আন্দোলন
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পূর্বে আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা: জিয়াউদ্দিন উর্দুকে পাকিস্তান রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব করলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. শহীদুল্লাহ্ পাল্টা বাংলা ভাষার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। একই সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল কাসেমের নেতৃত্বে ‘তমুদ্দুন মজলিস’ পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষার দাবিতে প্রচারাভিযান শুরু করে। পাকিস্তানের গনপরিষদে বাংলা ভাষার স্থান না হওয়ায় ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সমাজ প্রতিবাদ সভা, সাধারণ ধর্মঘট ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। ঐ দিন পুলিশ ছাত্রদের বাধা দেয় এবং বহু ছাত্রকে গ্রেফতার করে। বন্দী নেতাদের মধ্যে ছিলেন শামসুল হক, শেখ মুজিবুর রহমান,অলি আহাদ, শওকত আলি, কাজী গোলাম মাহবুব প্রমুখ। এরপরও ছাত্র আন্দোলন চলতে থাকে। শেষ পর্যন্ত ১৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন ছাত্রদের সাথে একটি চুক্তি পত্র সাক্ষার করেন। এর চার দিন পর পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকা শহরে আসেন এবং ২১ মার্চ তারিখে ঢাকা ঘোড়দৌড় ময়দানে এক বিরাট জনসভায় বক্তৃতা করেন এবং উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার স্পষ্ট ঘোষণা দেন। মার্চ ২৪ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সমাবর্তন অনুষ্ঠানে জিন্নাহ ভাষণ দেন। এখানে তিনি বলেন,
রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রদেশের যোগাযোগের ভাষা হিসেবে একটি ভাষা থাকবে এবং সে ভাষা হবে উর্দু অন্য কোন ভাষা নয়। কাজেই স্বাভাবিকভাবে রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু, যা এই উপমহাদেশের লক্ষ লক্ষ মুসলমানের দ্বারা পুষ্ট হয়েছেন। পাকিস্তানের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের সকলকেই বোঝেন এবং সব সময় যার মধ্যে অন্য কোনো প্রাদেশিক ভাষা থেকে অধিক ইসলামী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বাস্তব রুপ লাভ করেছেন এবং সে ভাষা অন্যান্য ইসলামী অনেক দেশগুলিতেও ব্যবহৃত ভাষার সর্বাপেক্ষা কাছাকাছি ।
মার্চ ২৪ তারিখে রাষ্ট্রভাষা কর্ম পরিষদের একটি প্রতিনিধিদল জিন্নাহ্র সাথে সাক্ষাৎ করেন ও বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানিয়ে একটি স্মারকলিপি পেশ করেন। এই প্রতিনিধিদলে ছিলেনশামসুল হক, কামরুদ্দিন আহমেদ, আবুল কাশেম, তাজউদ্দিন আহমেদ, মোহাম্মদ তোয়াহা, আজিজ আহমদ, অলি আহাদ, নঈমুদ্দিন আহমদ, শামসুল আলম এবং নজরুল ইসলাম। ১৯৪৮ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে এক সভায় পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম সরকার বিরোধী সংগঠন ‘পূর্ব পাকিস্তান মুসলীম ছাত্রলীগ’ গঠিত হয়।
১৯৪৮ এর ২৭ নভেম্বর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলি খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠে এক ছাত্র সভায় ভাষণ দেন। এই সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র ইউনিয়নের তরফ থেকে বাংলা ভাষার দাবি পুনরায় উত্থাপন করা হয়। কিন্তু লিয়াকত আলি খান কোন মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকেন।
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা
১৯৬৭ সালে আইয়ুব সরকার পূর্ব পাকিস্তানের কয়েকজন সামরিক ও বেসামরিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে লেফেটেন্যান্ট কর্ণেল মোয়াজ্জেম হোসেনকে আসামী রুপে ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’ করে। কয়েকদিন পর শেখ মুজিবকে প্রধান আসামী করা হয়। এই মামলার কারনে সমগ্র পূর্ব বাংলার মানুষ ফেটে পরে ও এই আন্দোলনের প্রধান নেতৃত্ব দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ দফায় গঠিত সর্বদলীয় সংগ্রাম সংগ্রাম পরিষদ ।
মুক্তিযুদ্ধ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এক গুরুত্বপূর্ণ দলিল। একাত্তরে পাকিস্তান সশস্ত্রবাহিনী বাঙালি সৈনিক, বৈমানিক ও ছাত্রছাত্রীগনকে একই পর্যায়ভুক্ত করে আক্রমণ চালিয়েছিল। এই অপারেশনের নাম ছিল “অপারেশন সার্চ লাইট” এইচ আওয়ার নির্ধারিত হয়েছিল ২৬ মার্চ রাত ১ টা। ক্যান্টনমেন্ট থেকে সেনাবাহিনী প্রথম প্রতিরোধের সম্মুখীন হয় ফার্মগেটে। রাস্তায় পড়ে থাকা একটি বিশাল গাছ বাহিনীর গতিরোধ করে, রাস্তার পাশের এলাকা পুরানো গাড়ি আর স্টিম রোলার দিয়ে বন্ধ ছিল।
- ড. ফজলুর রহমান মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগ,
- অধ্যাপক এ. আর. খান খাদিম গণিত বিভাগ,
- অধ্যাপক শরাফত আলী,
- ড. গোবিন্দচন্দ্র দেব প্রাক্তন প্রোভস্ট জগন্নাথ হল,
- অধ্যাপক মনিরুজ্জামান,
- ড. জ্যোতির্ময় গুহঠাকুর প্রোভস্ট জগন্নাথ হলের,
- অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য,
- অধ্যাপক মুহম্মদ মুকতাদির ভূতত্ত্ব প্রমুখ।
আশা করি আমাদের প্রত্যেকটি পোষ্ট আপনাদের ভালোলাগবে এবং উপকারে আসবে ।
গাজীপুর জেলা ইতিহাস এবং দর্শনীয় স্থান।
বিজ্ঞান থেকে আসা গুরুত্বপূর্ণ ৫০ টি প্রশ্ন/উত্তর
বাংলাদেশের সকল জাতীয় দিবস সমূহ
বাংলা ব্যাকরণ. ধ্বনিতত্ত্ব থেকে কিছু গুরত্বপূর্ণ প্রশ্ন/উত্তর
বাংলাদেশ স্বাস্থ্যসেবা সাধারন জ্ঞান
স্বামী স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ এক হলে কি কোনো সমস্যা হয় ?
স্বাস্থ্য ভালো রাখতে খাওয়ার পর যে কাজগুলো করবেন না ?
দুধ -আনারস একসাথে খেলে কি মানুষ মারা যায় ? জেনেনিন এর সঠিক উত্তর ।
পিরিয়ড চলাকালিন মেয়েরা যেসব কাজ থেকে বিরত থাকবেন ।
পর্যাপ্ত ঘুম না হলে ক্ষতি কী । এবং জেনে নিন ঘুম না হলে কী করবেন ?